নদী ভাঙন
‘বাপের দেওয়া ভিটাবাড়িও কাড়ি নিছে তিস্তা’
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই তিস্তার পাড়ের বাসিন্দা রুহুল আমীন। বিয়ের পর পৈতৃকসূত্রে জমি পেয়েছিলেন পাঁচ বিঘা। তবে গত কয়েক বছরের বন্যায় নদীভাঙনে তিস্তায় বিলীন হয়েছে বাবার দেওয়া সেই জমি। কয়েকবার নদীগর্ভে হারিয়েছেন ভিটাবাড়িও। বর্তমানে কোনো রকম তিস্তার তীরে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি।
রুহুল আমিনের মতো প্রায় একই অবস্থা ওই এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবারের। তিস্তার গর্ভে সর্বস্ব হারিয়ে কোনোরকম টিকে আছে তারা।
এদিকে শুরু হয়েছে বর্ষা মৌসুম। বর্ষার শুরুতে কয়েক দফায় বেড়েছে তিস্তার পানি। এতে আসন্ন বন্যায় আবারও সর্বস্ব হারানোর চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষদের। মেঘলা আকাশ দেখলেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তিস্তার ভয়াল রূপ দেখা ছাড়া কোনো উপায় যেন নেই তাদের। এমন অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে কয়েকটি স্পার বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রুহুল আমীন বলেন, ‘বাপের দেওয়া পাঁচ-ছয় বিঘা জমি পাছিনো। সব শেষ নদীভাঙনে। কোনোবার তো বাড়িঘরগুলোও নিয়া যায়৷ বাপের দেওয়া ভিটাবাড়িও তিস্তা কাড়ি নিছে। সব হারায় কোনোরকম যাবর জীবন করে চলিছি, যা যাওয়ার সব গেছে। এটাই আমাদের দুঃখ। না পারছি কোথাও ঠাঁই, না পারছি এখান থেকে যেতে, বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। যদি সরকার বা পানি উন্নয়ন বোর্ড হামার এ এলাকায় কয়েকটা স্পার বাঁধ দিত। হামরা অন্তত কোনোরকম বাঁচি থাকির পাইতাম।’
একই এলাকার মোরশেদা বেগম বলেন, ‘যা ছিল সব শেষ কোনোরকম টিকে আছি। জায়গা-জমি নদী সব নিয়ে গেছে। এখন আমরা খুব নিরীহভাবে আছি। কষ্টে আছি। বাচ্চাদের মানুষ করব সে উপায় পাচ্ছি না। আমাদের রক্ষায় যা ব্যবস্থা নেওয়ার দয়া করে নেন। তাও আমদের বাঁচান।’
নুরুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, ‘আমরা টেপাখড়ি বাড়ি এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। এ এলাকাটা প্রতিবছর ভাঙে। কোনোরকম টিকে আছি। এ স্থানটাতে যদি চার-পাঁচটা স্পার বাঁধ বা বাঁশ দিয়ে জিও ব্যাগ ফেলানো যায় তাহলে অন্তত এবার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। আর কত হারাবো, হারানোরই বা কী আছে আর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নিবেদন এ ব্যবস্থাটা নিক।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সফিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এটি আমার নির্বাচনী এলাকা। প্রতিবছর আমরা দাবী জানিয়ে আসছি ব্যবস্থা নেওয়ার। তবে তারা কোনো ব্যবস্থা নেন না। তারা অন্তত আমাদের জিনিসপত্র সরবরাহ করুক৷ আমরা কামলা দিয়ে হলেও নিজেদের রক্ষা করবো। কিন্তু সেই সহযোগিতাটাও কেউ করছে না। আমার দাবি সরকার এ মানুষগুলোর দিকে তাকালেই তারা রক্ষা পাবে। আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে অনুরোধ জানাই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছরের তিস্তার ভয়াল রূপে উল্লেখযোগ্য বন্যা দেখেছে এ অঞ্চলের মানুষ। এতে সর্বস্ব হারিয়েছে নদীর তীরবর্তী মানুষরা। তেমনি বন্যা শেষে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে হাজার বিঘা আবাদি জমি। স্থানীয়রা জমি রক্ষায় স্পার বাদ নির্মাণের দাবি জানালেও, নদীগর্ভে যা কিছু আছে তা রক্ষায় কোনো করণীয় নেই বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা প্রিন্স জাগো নিউজকে বলেন, চরাঞ্চলে যে সব বাড়িঘর থাকে, সেগুলো কিন্তু অল্প বৃষ্টিপাতেই প্লাবিত হয়। মূলত এসব বাড়িঘর সেখানে থাকার কথা না, কারণ সেই জায়গা তো নদীগর্ভ। আমাদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ যে বাঁধ আছে সেগুলোর বাইরে তাদের থাকার কথা।
তিনি আরও বলেন, নদীগর্ভে আসলে আমাদের কোনো করণীয় নেই। তবে আমাদের যেসব বাঁধ বা অবকাঠামো আছে সেগুলোর মাধ্যমে আমরা জনগণের জান-মাল ও কোনো এলাকা যেন প্লাবিত না হয় সে বিষয়ে কাজ করছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।
রাজু আহম্মেদ/এসজে/জেআইএম