চাঁদপুরে যুবলীগকর্মীকে গুলি করে হত্যা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে আসার পথে প্রতিপক্ষের গুলিতে মোবারক হোসেন বাবু (৪৮) নামে এক যুবলীগকর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। শনিবার (১৭ জুন) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরে এ ঘটনা ঘটে। এতে মুসা নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত মোবারক হোসেন বাবু ওই গ্রামের আবুল ব্যাপারীর ছেলে। এ ঘটনায় আহত জহির (২০) ও ইমন (১৮) নামে আরও দুজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং জহির (৩২) ও বিলকিছকে (৩৫) মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের ভাই আমির হোসেন কালু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা বাহাদুরপুর থেকে রওয়ানা হই। এসময় মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মিজানের কর্মী-সমর্থকরা আমাদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে আমার ভাই মোবারক হোসেন বাবুসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।
আমির হোসেন বলেন, আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাদের সবার ফাঁসি চাই।
মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মো. হাসিবুল ইসলাম জানান, আহত অবস্থায় মোবারক হোসেন বাবুসহ আরও চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। বাবু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো সব গুলির চিহ্ন। বাকিদের মধ্যে দুজনকে ঢাকায় ও অন্যদের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে মতলবে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ সভা করছিলাম। আজ মতলব উত্তরের মোহনপুর ইউনিয়নে ছিল ১৫তম প্রতিবাদ সভা। ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড নদীর ওপারে। আজকের প্রতিবাদ সভায় নদীর ওপর থেকে ট্রলারযোগে নেতাকর্মীরা আসছিল। হঠাৎ আমরা খবর পাই, নেতাকর্মীরা যেন মিছিলে না আসতে পারে সেজন্য কাজী মিজান ও কাজী হাবিবের নেতৃত্বে কয়েকটি ট্রলার এসে তাদের আক্রমণ করে। আমাদের এক যুবলীগ নেতাকে তারা গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া আরও দুজন গুরুতর আহত হন। নেতাকর্মীরা যেন সভায় না আসে, সেজন্য গতরাতে কাজী মিজান ও তার ভাই কাজী হাবিব বাহেরচর ও বাহাদুরপুরে গিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসে বলে জানতে পেরেছি।
তবে অভিযুক্ত কাজী মিজানুর রহমান বলেছেন, যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের যেন অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হয়। আমি মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছি। যারা ভোট দিয়েছে, তারা সবাই আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে। তাই বলে এমন নয়, যারা অপরাধ করবে তারা সবাই আমার কর্মী। আমি চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনা হোক।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমি যখন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হই, শুধু আমার ইউনিয়নে আইন-শৃঙ্খলা সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাখতে আমি কোনো ধরনের আনন্দমিছিল বা উৎসব করিনি। তাহলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আমি এখন কেন করতে যাবো? আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য আমার নাম ব্যবহার করছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করা গেলে প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হবে।
এ ঘটনায় মতলব উত্তর থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, সমাবেশে যোগদান করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীরা রওয়ানা হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মিজানের সমর্থক রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি দল গুলিবর্ষণ করে বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় মুসা নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্ত আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।
নজরুল ইসলাম আতিক/এমআরআর/কেএএ/জিকেএস