সাংবাদিক নাদিম হত্যা

ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত বাবা-ছেলে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৬:০০ এএম, ১৭ জুন ২০২৩
মাহমুদুল আলম বাবু (বামে) ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত

জামালপুরের বকশীগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম (৪২) হত্যাকাণ্ডের দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনার ‌‘মাস্টারমাইন্ড’ সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত (২৩) এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। বাবু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রিফাত উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক।

পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রয়েছেন।

আরও পড়ুন: নাদিম হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড চেয়ারম্যান বাবু: এসপি নাছির

স্থানীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, গত ১০ মে সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর বিরুদ্ধে সন্তানের স্বীকৃতি ও স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক নারী। দাবির সপক্ষে সংবাদ সম্মেলনে দুটি কাবিননামা সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন ভুক্তভোগী। এ নিয়ে বাংলানিউজসহ একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ক্ষুব্দ হন চেয়ারম্যান। পরে ১৭ মে ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাবুনালে সাংবাদিক নাদিমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন মাহমুদুল আলম বাবু। বুধবার (১৪ জুন) মামলাটি খারিজ করে দেন ময়মনসিংহ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল।

পরে ওইদিন রাতে পেশাগত দায়িত্বপালন শেষে বকশীগঞ্জ বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম। তিনি পাটহাটি এলাকায় পৌঁছালে পূর্ব পরিপরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালান এবং মারতে মারতে টেনেহিঁচড়ে একটি অন্ধকার গলিতে নিয়ে যান। পরে চেয়ারম্যানপুত্র রিফাত ইট দিয়ে নাদিমের মাথায় সজোড়ে আঘাত করেন। এসময় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন চেয়ারম্যান নিজেই।

আরও পড়ুন: ‘নাদিমের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন চেয়ারম্যানপুত্র রিফাত’

মারধরে সাংবাদিক নাদিম অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ফেলে পালিয়ে যান হামলাকারীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাত ১২টায় জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী মনিরা বেগমের অভিযোগ, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বাবু সম্প্রতি নাদিমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। বুধবার মামলাটি খারিজ হওয়ার পর চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ক্ষিপ্ত হন এবং লোকজন দিয়ে নাদিমের ওপর হামলা করেন।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবিরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিম হত্যার ঘটনায় রিফাত জড়িত থাকলে অচিরেই আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।

আরও পড়ুন: ‘আমার পোলাডারে বাবু চেয়ারম্যান মাইরা ফালাইছে’

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে রয়েছে।

এদিকে শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় বকশীগঞ্জ নুর মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম জানাজা ও গুমেরচর জিগাতলা ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সাংবাদিক নাদিমের। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গ্রামের বাড়ি নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নে গুমেরচরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

নাসিম উদ্দিন/এসআর

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।