হারিয়ে যাচ্ছে তিস্তার ‘রুপালি’ মাছ বৈরালি

রবিউল হাসান
রবিউল হাসান রবিউল হাসান লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ১৫ জুন ২০২৩

তিস্তা ও ধরলা নদীর অববাহিকার রুপালি বৈরালি মাছ দিনদিন হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় এ অঞ্চলের নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়া সুস্বাদু এই মাছটি এখন বিলুপ্তির পথে।

নদীতে জাল ফেলে কয়েকবার টানলেও আশানুরূপ মাছ মিলছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তাও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তায় জাল টেনে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন কিছু জেলে। পাতিলে করে মাছ নদীর কিনারায় আনামাত্রই তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

jagonews24

এলাকাবাসী জানায়, উজানে একাধিক জায়গায় বাঁধ দেওয়ার ফলে তিস্তা ও ধরলায় পানি প্রবাহ কমে গেছে। এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, কারেন্ট জাল দিয়ে পোনা শিকারসহ অভয়াশ্রম থেকে মা মাছ শিকারের ফলে বিলুপ্তির পথে বৈরালি মাছ। একই কারণে নদীর দেশি প্রজাতি অন্য মাছের সংখ্যাও কমে গেছে। হারিয়ে গেছে শুশুক, ঘড়িয়াল, মিঠা পানির কচ্ছপসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ বৈরালি মাছের প্রজনন ও বেড়ে ওঠার সময়। কিন্তু ওই সময়েও তিস্তা ও ধরলা থেকে প্রতিদিন বৈরালির পোনা শিকার করেন জেলেরা। সেসব পোনা স্থানীয় হাট-বাজারে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ওইসব পোনা বড় হলে মে-জুনে মাসে ওজন বেশি হতো। জেলেরাও লাভবান হতে পারতেন।

jagonews24

তিস্তাপাড়ের জেলে কাল্টা মিয়া বলেন, আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। প্রতিবছর তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ার কারণে মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে কিছু পানি এসেছে। এই পানিতে কয়েকবার জাল টেনেও আশানুরূপ মাছ উঠছে না। দুজন মিলে সারাদিন বিভিন্ন জাতের দুই কেজি মাছ পাওয়া যায়। সেই মাছ তিনশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে চাল, ডাল, তেল কিনে পকেটে টাকা থাকে না। অন্য কাজও পারি না। তাই বাধ্য হয়ে মাছ ধরার অপেক্ষায় বসে থাকি।

তিস্তাপাড়ের জেলে কদম আলী বলেন, গতবছর নদীতে ইলিশ মাছ ধরেছি। এবছর ইলিশ চোখেই পড়েনি। বর্তমানে তিস্তায় একটু করে বৈরালি ধরা পড়ছে তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। বৈরালি মাছের চাহিদা থাকলেও নদীতে আর তেমন একটা মিলছে না।

jagonews24

মাছ ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, প্রতিদিন তিস্তাপাড়ে এসে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করি। এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। খুব কঠিন অবস্থায় আছি। এই তিস্তায় একসময় বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যেত। দিনেদিনে তিস্তা থেকে বৈরালি, ঘাঁঘসি, দাড়াগিং, ঘোল, খট্টি, ভাগনা, বাইম, বোয়াল, আইড় হারিয়ে গেছে। দেশীয় মাছ আর চোখে দেখা যায় না। এতে আমাদের ব্যবসাও কমে গেছে।

তিস্তাপাড়ের মৎস্যজীবী কমিটির সদস্য ভুট্টু মিয়া বলেন, বর্তমানে তিস্তায় পানি আছে তাই বৈরালি মাছ ধরছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু জেলে ব্যাটারির সাহায্যে কারেন্ট তৈরি করে মাছ নিধন করছে। এতে বড় মাছটি ধরা পড়লেও ছোট পোনা একেবারেই নিধন হচ্ছে। তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন মাছ নিধনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন।

jagonews24

লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা ও ধরলা নদীতে সুস্বাদু বৈরালি মাছ পাওয়া যায়। প্রতিবছর নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার কারণেই মাছ কমে যাচ্ছে। বৈরালি মাছরক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এ মাছের চাহিদা ব্যাপক। ব্যাটারি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে মাছ নিধনের বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি।

এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।