কানসাট আম বাজারে ৫৪ কেজিতে হয় একমণ!
সবার জানা ৪০ কেজিতে হয় এক মণ। তবে সেই হিসাব পাল্টে দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আম বাজার। এখানে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে এক মণ ধরে আম কিনছেন আড়তদাররা। এমনকি টাকা দেওয়ার সময়ও ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত কম দিচ্ছেন চাষিদের। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আম চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজশাহী বিভাগের সব আম বাজারে এই প্রথা চালু থাকায় কানসাট বাজারে ওজন নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে কানসাট আম বাজারে গিয়ে জানা যায়, তিন বছর আগে কানসাটে আম বিক্রি হতো ৪৫ কেজিতে মণ ধরে। তবে আড়তদাররা দিন দিন এই ওজন বাড়াতেই আছেন। ২০২১ সালে ৫০ কেজিতে মণ নিয়েছেন। আর গত বছর থেকে শুরু হয়েছে ৫২ কেজিতে মণ। এড়াছাও অনেক সময় ৫৪ কেজিতেও নেওয়া হয়।
কানসাট বাজারে দুই ভ্যান আম বিক্রি করতে এসেছিলেন আব্বাস বাজার এলাকার চাষি রোবিউল আওয়াল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কানসাট বাজারে আড়তদারদের কছে জিম্মি আম ব্যবসায়ীরা। সুযোগে ৫২-৫৪ কেজিতে আমের মণ নিচ্ছেন আড়তদাররা। আমরা কোনো কিছুই বলতে পারি না। পরিমাপের সময় পরিপূর্ণ কেজির পর ৭০০-৮০০ গ্রাম বেশি নিবেই। ঝামেলা করলে অর্ধেকের বেশি আম বেছে নিবে। ওজনের পর আবার খাওয়ার জন্য দুই থেকে তিন কেজি চাইবে। না দিলে টাকা দেবে না বলে জানায়। টাকা দেওয়ার সময় ফের ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত কম দিচ্ছে।
কানসাট বাজারে আম বিক্রির জন্য এসেছেন শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য। তিনি বলেন, আমি ২০০০ সাল থেকে কানসাট বাজারে আম বিক্রি করি। কাঁচা আমের জন্য প্রথম থেকেই ১-২ কেজি বেশি নিত। কিন্তু গত তিন বছর থেকে শুরু হয়েছে ডাকাতি। একমণে ১২-১৪ কেজি বেশি নিচ্ছেন আড়তদাররা। আমরা সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তার সঙ্গেও যোগযোগ করেছি। কিন্তু সুফল মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, আম ব্যবসায়ীদের সমিতি রয়েছে। আম চাষিদেরতো আর সমিতি নেই। তারা অনেক স্থানে টাকা দিয়ে এই কর্যক্রম বজায় রাখছেন। কিন্তু আমরা কোথায় যাবো। এক মণে কি ১২-১৪ কেজি বেশি দেওয়া যায়?
শ্যামপুর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, আম হচ্ছে কাঁচা পণ্য। তাই আগে আমরা ৪৫ কেজিতে এক মণ ধরে আম বিক্রি করতাম। তবে গত তিন বছর থেকে হঠাৎ আড়তদাররা ৫০-৫৪ কেজিতে মণ নেওয়া শুরু করেন। এছাড়া আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহারও করে থাকেন তারা। এতে আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি।
কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, আমের মণ ৫২ কেজিতে ওজন নেওয়া এক ধরনের নৈরাজ্য। রাজশাহী বিভাগের সব আম বাজারে একই মাপে আম ওজন দেওয়ার বিষয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। তবেই নিয়ন্ত্রণে আসবে ওজন নিয়ে নৈরাজ্য।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত জাগো নিউজকে বলেন, জেলার সব উপজেলায় আমরা একটি ওজনে আম ক্রয়-বিক্রয় করাতে চাই। কিন্তু তা করতে পারছি না। কারণ রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি আম বাজারে ভিন্ন ভিন্ন ওজন ধরে আম বিক্রি হয়। আমি যদি শুধু কানসাট আম বাজারে ৪০ কেজিতে মণ ধরে আম কেনার নিয়ম করি তখন বাইরের যে ক্রেতাগুলো কানসাটে আসে তারা আর আসবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমচাষিরা। তাই আমরা রাজশাহীর বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সীদ্ধান্ত নেবো।
বর্তমানে এই বাজারে কোয়ালিটি অনুযায়ী খিরসাপাত বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকায়, ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়, লক্ষণভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় এবং নানা জাতের গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।
জেলায় এবার ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।
এফএ/এমএস