ইউএনওর সহায়তায় ঢাবিতে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে রাজিয়ার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া
প্রকাশিত: ০২:১০ পিএম, ১৩ জুন ২০২৩
রাজিয়া ও তার বাবা আব্দুর রাজ্জাকের হাতে টাকা তুলে দেন ইউএনও রিপন কুমার বিশ্বাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রাজিয়া সুলতানা। তবে অর্থের অভাবে পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার। অবশেষে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন কুমার বিশ্বাস।

রাজিয়া খোকসা উপজেলার পাইকপাড়া মির্জাপুর গ্রামের হতদরিদ্র কাঠমিস্ত্রি আব্দুর রাজ্জাক ও সেলিনা খাতুন দম্পতির মেয়ে। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। টাকার অভাবে বাবার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। শৈশবে এ গল্প শোনার পর অভাবের সঙ্গে বেড়ে ওঠা রাজিয়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন বোনেন।

আরও পড়ুন: ১২ হাজার টাকার জন্য অপারেশন আটকে আছে মুন্নাফের

২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষে আলহাজ সাইদুর রহমান মন্টু মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। পঞ্চম, অষ্টম ও এসএসসিতে কৃতিত্বের সঙ্গে জিপিএ ৫ পান রাজিয়া। চলতি শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৯১৫ তম স্থান অধিকার করেন।

এদিকে তার একমাত্র ভাই রেজাউল ইসলাম রাজুকে ভর্তি করা হয় ঝিনাইদহ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে। দুই সন্তানের পড়াশোনার ব্যয় চালাতে চরম টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েন কাঠমিস্ত্রি রাজ্জাক। এ নিয়ে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

এদিকে টাকার অভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজিয়া ভর্তির না হতে পারার বিষয়টি জানতে পারেন খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার বিশ্বাস। সোমবার (১২ জুন) রাজিয়া ও তার বাবাকে নিজের অফিসে ডেকে নেন তিনি। এ সময় রাজিয়ার হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১০ হাজার টাকার একটি চেক দেন।

ইউএনওর সহায়তায় ঢাবিতে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে রাজিয়ার

রাজিয়ার মা সেলিনা খাতুন বলেন, চলতি মাসের ১৮ তারিখে ভর্তি চূড়ান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে আরও প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া মেয়েকে ঢাকায় রেখে পড়াতে প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকা লাগবে। এ টাকা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। ইউএনও আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আশা করি মেয়ে পড়া চালিয়ে যেতে পারবে।

আরও পড়ুন: সুবিচারের জন্য শরীরের অঙ্গ বিক্রির লিফলেট সাঁটালেন নারী

রাজিয়া সুলতানা বলেন, টাকার অভাবে বাবা তৃতীয় শ্রেণির পর আর পড়তে পারেননি। পড়াশোনা করতে না পারায় সরকারি চাকরি করা বন্ধুদের সঙ্গে বসতে লজ্জা পান। এ গল্প শোনার পর থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রতিজ্ঞা করি। বাবা-মায়ের ওপর চাপ কমাতে নিজে পড়ার পাশাপাশি ছোট ভাই ও প্রতিবেশী ছাত্রদের প্রাইভেট পড়াই।

তিনি আরও বলেন, স্কোর সমস্যা হওয়ায় পছন্দের সাবজেক্টে (বিষয়ে) ভর্তি হতে পারছি না। তবে বাণিজ্য শাখায় ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর থেকে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ভর্তির সময় একবারে প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাগবে। এতো টাকা যোগাড় করা দুষ্কর ছিল। ইউএনও পাশে দাঁড়িয়েছেন। দুই বাচ্চার পড়ার খরচ যোগাতে দিন রাত কাজ করবো। তবুও তাদের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেবো না।

আল-মামুন সাগর/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।