১২ হাজার টাকার জন্য অপারেশন আটকে আছে মুন্নাফের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৪:১২ পিএম, ১২ জুন ২০২৩

একসময় ঘুরে ঘুরে ভাঙ্গারী কিনতেন ও হাঁড়িপাতিল বিক্রি করতেন মুন্নাফ শেখ (৪৬)। স্ত্রী অন্ধ। একমাত্র মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। আপন বলতে এরাই। হঠাৎ মূত্রনালীতে পাথর ধরা পড়েছে মুন্নাফের। চিকিৎসক বলেছেন দ্রুত অপারেশন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ১২ হাজার টাকা। কিন্তু দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মিলছে না সেই টাকা। টাকার জন্য আটকে আছে তার চিকিৎসাও।

মুন্নাফ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের রুদ্র বয়ড়া এলাকার মৃত হাসান শেখ ও মহিরন বেওয়ার ছেলে। খুব ছোটকালে বাবা-মাকে হারান। তারপর স্থানীয় এক এতিমখানায় বড় হন তিনি। বড় হয়ে বয়ড়া বাজারেই বসবাস শুরু করেন। বিয়ে করেন এক অন্ধ নারীকে। বর্তমানে সরিষাবাড়ী পৌরসভার শিমলাপল্লীর তাইড়াপাড়া এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন তিনি। কিন্তু শ্বশুড়বাড়ির লোকজনও স্বচ্ছল নন। তাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।

মুন্নাফ শেখ জানান, মা-বাবার কথা মনে নেই তার। বড় হয়েছেন স্থানীয় একটি এতিমখানায়। তার আপন বলতে অন্ধ স্ত্রী ও এক মেয়ে। আগে তিনি ঘুরে ঘুরে ভাঙ্গারী কিনলেও এখন সেটা করতে পারেন না। বেশ কিছুদিন হলো তার মূত্রনালীতে পাথর ধরা পড়েছে। প্রস্রাবে অনেক জ্বালাপোড়া করে। ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করতে হবে। এতে ১২ হাজার টাকার প্রয়োজন। এছাড়াও ওষুধ বাবদ আরও ৬-৭ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু তার পক্ষে এতো টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সাহায্যের জন্য।

তিনি বলেন, মানুষ যা দিচ্ছে তা দিয়ে তার অপারেশন হবে না। এছাড়াও বেশ কিছুদিন ধরে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সম্প্রতি ফেসবুকে ‘মিলন স্মৃতি পাঠাগার’র উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান আসাদ ও ‘চলো হাত বাড়াই’ ফাউন্ডেশনের পরিচালক লুৎফর রহমান সাহায্য-সহযোগিতার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। যা অনেকের মনে দাগ কাটলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাচ্ছেন না তারা।

‘মিলন স্মৃতি পাঠাগার’র উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান আসাদ ও ‘চলো হাত বাড়াই’ ফাউন্ডেশনের পরিচালক লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লোকটি খুবই অসহায়। আপন বলতে তার কেউ নেই। তাই তাদের কাছে ছুটে এসেছেন। একসময় তাদের এলাকার আশেপাশে ঘুরে ঘুরে হাঁড়িপাতিল বিক্রি করতেন মুন্নাফ। হঠাৎ তাকে এই অবস্থায় দেখে খুবই মায়া লাগছে। দীর্ঘদিন এই এলাকায় ছিলেন বলে ঘুরে ঘুরে সাহায্য কামনা করছেন।

পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক জাগো নিউজকে বলেন, লোকটির অসুস্থতার খবরটি আমার জানা নেই। কেউ যোগাযোগও করেনি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চিকিৎসা সংক্রান্ত আর্থিক সহায়তার খাতও নেই। যোগাযোগ করলে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করবো।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা দপ্তরে চিকিৎসা সংক্রান্ত সহায়তার কোনো খাত নেই, তবে দরিদ্রদের সহায়তার জন্য একটা খাত আছে। লিখিত আবেদন পেলে সংশ্লিষ্ট কমিটির বৈঠকে উপযুক্ত মনে হলে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হবে।

নাসিম উদ্দিন/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।