নরসিংদী

জীবিত হওয়ার আশায় মরদেহের সঙ্গে ৬ দিন বসবাস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নরসিংদী
প্রকাশিত: ০৬:৫৯ পিএম, ১১ জুন ২০২৩

মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হবেন—এমন বিশ্বাসে নরসিংদীতে ছয়দিন ঘরের মধ্যেই রেখে দেওয়া হয় এক নারীর মরদেহ। একপর্যায়ে মরদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বাড়ির আশপাশে। খবর পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে খাটের নিচ থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে ওই নারীর স্বামী, চার মেয়েসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য সবাইকে মনোহরদী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শনিবার (১০ জুন) রাতে নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোক্তার উদ্দিন তালুকদারের পরিবারে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশেই নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন মোক্তার উদ্দিন তালুকদার। সঙ্গে তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৫), চার মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনি থাকতেন। তারা সবাই আটরশি পিরের ভক্ত ছিলেন। তারা কেউই বাসা থেকে খুব একটা বের হতেন না। নিজের বাড়িতে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এসব নিয়ে প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞাস করলেও কোনো সদুত্তর দিতেন না। প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন তারা।

মৃত শামীমা সুলতানা নাজমা তার স্বামী ও পরিবারের সদ্যদের বলে গিয়েছিলেন, তিনি মারা গেলে তার মরদেহ যেন ঘরে রেখে অপেক্ষা করা হয়। ৩-৪ দিন পর তিনি পুনরায় জীবিত হবেন। সোমবার (৫ জুন) শামীমা সুলতানা মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি কাউকে জানাননি। তারা সবাই জীবিত হওয়ার আশায় মরদেহ খাটের নিচে রেখে দেন।

একপর্যায়ে মরদেহে পচন ধরে। ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। দুর্গন্ধ তীব্র হলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া দেননি। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে পুলিশ। সেখানে পরিবারের সবাইকে ঘরে অবস্থান করতে দেখা যায়। ওই সময় খাটের নিচে নাজমার মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, ‘থানা থেকে রাতেই তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রেশার বেশি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। তবে তাদের শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।’

এ বিষয়ে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, পরিবারটি এক পিরের মুরিদ ছিল। জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। পুনরায় জীবিত হবেন আশায় তারা মরদেহ খাটের নিচে রেখে দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ওই নারীর স্বামী, চার মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এটি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক মৃত্যু তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে।

সঞ্জিত সাহা/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।