হিটস্ট্রোকে মরছে মুরগি, কমেছে ডিম উৎপাদন

শেখ মহসীন
শেখ মহসীন শেখ মহসীন ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ১১ জুন ২০২৩

পাবনার ঈশ্বরদীতে টানা দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। গত দুই সপ্তাহ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করেছে। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন খামারেও। তীব্র গরমে খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে।

প্রাথমিক চিকিৎসা ও খামারে পানি ছিটানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও হিটস্ট্রোকে মুরগির মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না। তাপমাত্রা বেশি থাকায় ডিমের উৎপাদনও কমেছে। আকারে ছোট হচ্ছে ডিম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা।

jagonews24

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ঈশ্বরদীতে ৪৫১টি নিবন্ধিত পোলট্রি খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রিডার সাতটি, লেয়ার ২২৬ ও ব্রয়লার ২১৮টি। অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়ে যাবে।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র দাবদাহের কারণে প্রতিদিনই খামারে মুরগি মারা যাচ্ছে। সম্প্রতি লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মুরগির মৃত্যু বেড়েছে। ওষুধ খাইয়ে ও পানি ছিটিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।

উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের বাগবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাহনাজ পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী সফর আলী বিশ্বাস। তার খামারে সাড়ে তিন হাজার মুরগি রয়েছে। এরমধ্যে দুই হাজার ২৫০টি মুরগি ডিম দেয়। প্রতিদিন খামার থেকে দুই হাজার ১৯০ থেকে দুই হাজার ২১০টি ডিম সংগ্রহ করা যেতো।

আরও পড়ুন: দাবদাহে মরছে সাদা সোনা

jagonews24

সফর আলী জাগো নিউজকে জানান, অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে ডিম উৎপাদন কমে গেছে। এখন এক হাজার ৮৫০টি ডিম উৎপাদন হয়। গত সাতদিনে ৫০টির মতো মুরগি মারা গেছে।

তিনি বলেন, বাচ্চা থেকে ডিম উৎপাদন পর্যন্ত একটি মুরগির পেছনে খরচ হয় ৮০০ টাকা। সে হিসেবে মুরগি মারা যাওয়ায় ক্ষতি প্রায় ৪০ হাজার টাকা। প্রতিদিন প্রায় ২০০ ডিম কম উৎপাদন হওয়ায় লোকসান হচ্ছে প্রায় দুই হাজার টাকা।

আথাইল শিমুল গ্রামের আল-রাবী পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী জাহাবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘২৪ বছর ধরে পোলট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে এর আগে গরমে কখনো এত মুরগি মারা যায়নি। এবার তীব্র দাবদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে খামারের অনেক মুরগি মারা গেছে।’

আরও পড়ুন: দিনে-রাতে ২০ ঘণ্টাই লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন

jagonews24

তিনি বলেন, ‘আমার খামারে সাড়ে তিন হাজার মুরগি ডিম দেয়। এরমধ্যে ১০ দিন ধরে ৫০০ মুরগি ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। গরমে মুরগি খাবার খাচ্ছে কম। এতে মুরগির ওজনও কমে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।’

মুলাডুলি গ্রামের আহাদ পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী আহাদ আলী বলেন, ‘খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। এরমধ্যে শতাধিক মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা গেছে। হিটস্ট্রোক থেকে মুরগিকে রক্ষা করা সম্ভব নয় তাই দ্রুত কম দামে বিক্রি করে দিয়েছি। শুধু দাবদাহের কারণে আমার বিশাল অংকের টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। এটি কীভাবে সমন্বয় করবো বুঝতে পারছি না।’

পাবনা জেলা পোলট্রি খামার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রচণ্ড দাবদাহের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ব্রয়লার মুরগি। ডিম উৎপাদনও কমে গেছে। তীব্র দাবদাহে খামারিদের এবার ক্ষতি হচ্ছে।’

jagonews24

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈশ্বরদী দেশের উষ্ণতম এলাকা হিসেবে পরিচিত। গরমের মৌসুমে তাপমাত্রা দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি থাকে। গত ১০ দিনে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হলেও ঈশ্বরদীতে হয়নি। তাই তাপমাত্রা স্বাভাবিক হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, নেসকোর অধীনে ঈশ্বরদীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৩৭ মেগাওয়াট। সেখানে প্রতিদিন সরবরাহ থাকে ২৭-২৮ মেগাওয়াট। এ কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।

আরও পড়ুন: চার্জার ফ্যান এখন ‘সোনার হরিণ’

পিজিসিবির ঈশ্বরদীর জয়নগর সার্কেলের তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাময়িক ঘাটতির কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছিল। তবে গত দুদিনে লোডশেডিং কমেছে। সামনের দিনে আরও কমবে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী উপজেলা ও পাবনা সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামসহ এখানে বিদ্যুতের চাহিদা ২৯ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় সবসময় ৩-৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ এখানে কম থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই লোডশেডিং হয়।

jagonews24

পল্লী বিদ্যুৎ দাশুড়িয়া অফিসের ডিজিএম কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। গত দুদিনে অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও কমে আসবে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হক হোসেন বলেন, হিটস্ট্রোক থেকে মুরগি বাঁচাতে খামারিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামারের ছাদ কিংবা টিনের চালায় ভেজা চট বিছানো এবং খামারে পানি ছিটালে উপকার পাওয়া যাচ্ছে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।