কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচন
শেষ সময়ে এগিয়ে নৌকা, বিজয়ী হতে তৎপর বিদ্রোহী প্রার্থী
কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন সোমবার (১২ জুন)। শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ ভোটাররা হিসাব মেলাচ্ছেন কে হবেন আগামীর পৌর মেয়র।
১২টি ওয়ার্ডের ৯৪ হাজার ৮০২ জন ভোটারদের মনকাড়তে মেয়র পদে এবারের নির্বাচনে পাঁচ প্রার্থী মাঠের লড়াইয়ে থাকলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী ওরফে মাবু এবং নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী (আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত) মাশেদুল হক রাশেদের মাঝে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে শুরুর দিকে বিপাকে ছিল আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থীর পারিবারিক, রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে প্রকাশ্যে তার পক্ষে অবস্থান নেন অনেক নেতাকর্মী। ফলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তবে গত ৫ জুন মাহাবুব-উল আলম হানিফের কক্সবাজার সফর দিয়ে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে।
পিছিয়ে থেকে অগোছালো প্রচারণা দিয়ে শুরু করলেও শেষ মুহূর্তে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাবুর পক্ষে মাঠে নামেন দলীয় নেতাকর্মীসহ ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা। ফলে পাল্টে গেছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। এখন নৌকার প্রার্থীর জয়ের বেশি সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
অপরদিকে, বাবার জনপ্রিয়তা এবং পাঁচ ভাই-বোনের আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ও স্থানীয় প্রভাবে নির্বাচনের শুরুর দিকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন নাগরিক কমিটির ব্যানারে নারিকেল গাছ প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ। তবে দল থেকে সব ভাই-বোন বহিষ্কার ও পদত্যাগ এবং জেলার প্রবীণ নেতাদের নিয়ে কটূক্তি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগারসহ নানা দাম্ভিকতাপূর্ণ বক্তব্যের কারণে শেষ মুহূর্তে এসে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন রাশেদ।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ওই পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা পাঁচ ভাই-বোনই কয়েকদিন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় তাদের বহিষ্কার করা হয়। তাদের হয়ে কাজ করছে এমন আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রায় ৪০ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী একযোগে মাঠে কাজ করছেন। যেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রচারণা দল আছে, একইসঙ্গে রয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, তাঁতিলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ অন্য অঙ্গ সংগঠনের পৃথক দল। প্রার্থীর বাইরে টানা প্রচারণায় সাধারণ ভোটারদের বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে। একারণে বিপুল ভোটে নৌকা বিজয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাবুর পক্ষে কক্সবাজার দোকান মালিক সমিতি ফেডারেশন প্রচারণা চালাচ্ছে জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, মাবুর পক্ষে ব্যবসায়ীরা ১২ ওয়ার্ডে ১২টি প্রচারণা দল নামিয়েছে। ব্যবসায়ীরা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন। এছাড়া নারিকেল গাছ মার্কার সমর্থক ও প্রার্থীরা সাতকানিয়া-লোহাগড়াবাসীকে হেয় করে নানা কথাবার্তা বলায় তারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকার জন্য মাঠে নামেন।
নৌকার অবস্থান আরও সুবিধাজনক হওয়ার কারণ উল্লেখ করে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে স্থানীয়-বহিরাগত একটি ইস্যু মাঠে এনেছেন। পৌরসভার ৯০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এখানে এসেছেন। এখানে স্থায়ী বলতে কিছু সংখ্যক রাখাইন ছিল। এতে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব পড়েছে। নারিকেল গাছের প্রার্থীর পক্ষ থেকে জেলার প্রথিতযশা কয়েকজন ব্যক্তি যারা এরইমধ্যে মারা গেছেন তাদের নিয়ে বিরূপ আচরণ করা হয়েছে। এটার প্রভাবও পড়েছে মাঠে।
জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, পৌরসভায় ১৫ হাজার হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ভোটার আছে। আমরা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নৌকা প্রতীকের বাইরে ভোট দিই না। এবারও আমরা নৌকার জন্য মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি, ভোটও নৌকায় দেবো। এভাবে সম্প্রদায়গতভাবে ভোটগুলো নৌকার পক্ষে গেলে, নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।
পৌর নির্বাচনের অংশ নেওয়ার কারণে রাশেদ হারিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ, তার ছোট ভাই সোহেলকে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, অপর ভাই কায়সারুল হক জুয়েলকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার এবং তার একমাত্র বোন তাহমিনা চৌধুরী লুনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এত কিছুর পরেও থামেননি বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।
বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে বহিষ্কৃত ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জানে আলম পুতু বলেন, কক্সবাজার পৌরসভায় রাশেদকে মানুষ কখনো আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনে করেন না। দলের নেতারা তাকেই মেয়র করতে মাঠে আছেন। একই সঙ্গে প্রার্থীর বাবা ও ভাই সবাই জনপ্রিয় মানুষ। ১২ জুন ভোটে নারকেল গাছ প্রতীকের বিজয় হবে।
মাসেদুল হক রাশেদের দাবি, সার্বিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্য দলের নেতাকর্মী, সাধারণ ভোটাররা তাকে ভোট দিতে আগ্রহী। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে তিনিই বিজয়ী হবেন। ভোটের পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
অন্যদিকে, মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, জনগণ বোঝে কার কাছে তারা নিরাপদ। আমাকে নিরাপদ মনে করেই জনগণ এবারও আমার পাশে রয়েছে। সাধারণ ভোটাররা নিরাপদ থাকতে, উন্নয়নের ধারাবাহিতা রক্ষায় নৌকার পক্ষে রায় প্রদানে সম্মত আছেন।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ। এবারের ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এমআরআর/এমএস