নেত্রকোনা
দিনে-রাতে ২০ ঘণ্টাই লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন
নেত্রকোনায় পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রামে ১৮-২০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতের আওতায় জেলার ১০টি উপজেলায় ১৪টি উপকেন্দ্র ও ৬৫টি ফিডার (লাইন) রয়েছে। মোট গ্রাহক ছয় লাখ ১৫ হাজার। আর জেলা শহরে পিডিবির আওতায় ৯টি ফিডারে মোট গ্রাহক ৫০ হাজার। পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ মিলে মোট ছয় লাখ ৬৫ হাজার গ্রাহকের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১২৬-১২৮ মেগাওয়াট। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকের চাহিদা ১০৫-১০৭ মেগাওয়াট। পিডিবির চাহিদা ২১ মেগাওয়াট। তবে বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে প্রায় অর্ধেক।
জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ গ্রিড থেকে নেত্রকোনা গ্রিডে। কিন্তু অব্যাহত লোডশেডিং জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন গ্রামাঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের অভিযোগ, দিনরাতে ১৮-২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তবে উপজেলা পর্যায়ের শহরে লোডশেডিং কিছুটা কম। পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র বলছে, উপজেলা সদরে হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকায় সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি।
বারহাট্টা উপজেলার আসমা ইউনিয়নের উজানগাঁও গ্রামের শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘এই গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। বয়স্ক লোক আর শিশুদের অবস্থা খুব খারাপ। রাতে ঘুমানো যায় না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে প্রায় ১৮-২০ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না।’
জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার পুরানহাটি গ্রামের মো. মোহসিন বলেন, ‘আমাদের হাওর উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম বৈষম্য হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা যেখানে বসবাস করেন তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ বেশি থাকে। অন্য জায়গাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র চার ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ থাকে। একবার বিদ্যুৎ গেলে তিন-চার ঘণ্টার আগে দেখাই মেলে না।’
মদনের তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের ফয়েজ আহমেদ হৃদয় বলেন, ‘সারা দিনে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই। গত তিন সপ্তাহ ধরে শুধু রাতেই ৭-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। বাচ্চাদের ঠিকমতো পড়াশোনাও হচ্ছে না। ঘরে অসুস্থ রোগী। খুবই কষ্ট হচ্ছে।’
এ বিষয়ে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘জেলায় বৃহস্পতিবার (৭ জুন) বিদ্যুতের চাহিদার ছিল ১০৭ মেগাওয়াট, সেখানে সরবরাহ হয়েছে অর্ধেকের মতো। চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো হলে লোডশেডিং কিছুটা কমে যাবে। এছাড়া আশা করা যাচ্ছে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুতের সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটবে।
নেত্রকোনা পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী বলেন, এখন পিডিবির চাহিদা ২১.৫০ মেগাওয়াট, গতকাল পেয়েছি ১৩ মেগাওয়াট। তাই কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। তবে যে লাইনে হাসপাতাল, আদালত, বিভিন্ন ব্যাংক, অফিস-আদালত বেশি সেই লাইনে কিছুটা কম লোডশেডিং দেওয়া হয়।
এইচ এম কামাল/এসআর/এএসএম