মেম্বারকে আসামি করে মামলা
যুবককে বিবস্ত্র করে গাছে বেঁধে নির্যাতন, ছেড়ে দেওয়া হয় পিঁপড়া
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে পুলিশ পরিচয়ে মো. সুমন (৩৫) নামের এক যুবককে তুলে নিয়ে বিবস্ত্র করে গাছে হাত বেঁধে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে। পরে তার মুখ কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়া হয়।
বুধবার (৭ জুন) রাতে উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামের ভুলুয়া নদীর পাশে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
সুমনের ভাষ্যমতে, ঘটনার সময় তাকে বিবস্ত্র করে শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়া হয়। একপর্যায় পানি চাইলে মুখে কাঁদা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বমি করলে ফের মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী সুমন পূর্বচরসীতা গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশারের ছেলে। পেশায় তিনি গাছ ব্যবসায়ী।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টার দিকে সুমনের ভাই আবদুল মাজেদ রাজিব বাদী হয়ে থানায় অপহরণ মামলা করেছেন। মামলায় ইউপি মেম্বার আবদুর রহিমসহ সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়।
পূর্ব শক্রতার জের ধরে রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুর রহিম ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠছে। আবদুর রহিম চরবাদাম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তবে ওই কমিটি স্থগিত রয়েছে।
তবে আবদুর রহিম দাবি করেছেন, ঘটনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়ে সুমনরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ করছেন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সুমনদের এলাকা পঞ্চায়েত বাড়ির জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে কয়েকজন লোক আসেন। একপর্যায়ে মামলা আছে বলে তারা পুলিশ পরিচয়ে সুমনকে তুলে নিয়ে যান। পঞ্চায়েত বাড়ির জামে মসজিদ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ভুলুয়া নদীর পাশে ফিরোজ মিয়ার প্রকল্প এলাকার নির্জন স্থানে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিনি সবাইকে চিনতে পারেন। এসময় গাছের সঙ্গে দুই হাত বেঁধে তার (সুমন) মোবাইল ফোন থেকেই ইউপি মেম্বার আবদুর রহিমকে কল দেওয়া হয়।
ফোন পেয়ে মেম্বার আবদুর রহিম ঘটনাস্থলে যান। এর পরই সুমনকে বিবস্ত্র করার নির্দেশ দেন তিনি। একপর্যায়ে তার শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে এলোপাতাড়ি লাথি-ঘুসি মারতে থাকেন। পরে মুখে কাদা ঢুকিয়ে দিলে বমি করেন সুমন। এসময় ফের মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে মুখমণ্ডল কালো কাপড়ে বেঁধে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান তারা।
সুমনের ছোট ভাই আবদুল মাজেদ রাজিব বলেন, ‘রাতে আমরা থানা ও ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেনেছি সুমনকে কেউ আটক করেননি। পরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে তাকে দেখতে পাই। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
নির্যাতনের শিকার সুমন বলেন, ‘আমি রহিম ও তার লোকজনের কাছ থেকে পানি চেয়েছি। তারা দেয়নি। আমার মুখে কাদা, লতাপাতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। রহিম ঘটনাস্থল পৌঁছার পরই আমার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। রহিমদের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে।’
রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, আবদুর রহিম খারাপ প্রকৃতির লোক। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী চরবাদাম ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি স্থগিত রয়েছে।
ঘটনাটি অমানবিক জানিয়ে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে সুমনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমি লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় অপহরণ মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কাজল কায়েস/এসআর/ইএ