বাড়তি লাভের আশা

হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না ব্যবসায়ী-কৃষক, বাড়ছে দাম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ০৮:০৩ এএম, ০৭ জুন ২০২৩
ছবি: জাগো নিউজ

পেঁয়াজের পর বাড়ছে আলুর দাম। এক মাসের ব্যবধানে জয়পুরহাটে সব জাতের আলুর কেজিতে দাম বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। এদিকে দাম আরও বাড়বে সে আশায় হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না কৃষক-ব্যবসায়ীরা।

খুচরা বিক্রেতাদের মতে, কেউ কেউ বাড়িতেই আলু মজুত রেখেছেন। বিক্রি করছেন না। আবার অনেকে হিমাগারে মজুত রাখা আলু বের করছেন না। ফলে দিন দিন আলুর দাম বাড়ছে।

জানা যায়, মাস খানেক আগেও জয়পুরহাটের খুচরা বাজারে কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) আলু প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকা, ডায়মন্ড (সাদা) ১৭-২২ টাকা, দেশি পাকরি (লাল) ২৫-৩০ টাকা এবং রুমানা পাকরি ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, কার্ডিনাল ও স্টিক আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা, ডায়মন্ড ৩৮, দেশি পাকরি ৪০-৪৫ ও রুমানা পাকরি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে সব আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত।

শহরের নতুন হাটে বাজার করতে আসা এনামুল হক, রবিউল ইসলাম ও সাত্তারসহ কয়েকজন জানান, কিছুদিন আগেও যে আলু ২০-২৫ টাকা কেজিতে পেয়েছি, এখন সেই আলু ১৫-২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এতে পেঁয়াজের মতো আলু নিয়েও ভোগান্তিতে পড়ছি।

এদিকে হিমাগার মালিক সমিতির তথ্যমতে, মার্চের শুরু থেকে এপ্রিল পর্যন্ত জয়পুরহাটের ১৬ হিমাগারে ৬৫ কেজি ওজনের ২০ লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ হয়েছে। ১ জুন (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত আলু বের হয়েছে গড়ে দেড় লাখ বস্তা, যা মোট মজুতের ৮ শতাংশ। হিমাগারে উৎপাদনের ৯২ শতাংশ মজুত আছে। উত্তোলনের শেষ সময় রয়েছে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

কালাইয়ে এম ইশরাত হিমাগারের ম্যানেজার বিপ্লব কুমার জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর ১৬টি হিমাগারে প্রায় ২১ লাখ বস্তা আলু মজুত ছিল। গত বছরের মে মাসে প্রকারভেদে এক কেজি কার্ডিনাল ও স্টিক (লাল) আলু ৭-৮ টাকা, ডায়মন্ড (সাদা) ৮-৯ এবং দেশি পাকরি (লাল) ১০-১২ টাকায় বিক্রি হয়। এবার একই পরিমাণ মজুত থাকলেও দাম বেড়েছে প্রায় চার-পাঁচ গুণ।

তিনি আরও বলেন, চাহিদা বাড়ার কারণে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বেশি লাভের আশায় হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না।

দুটি হিমাগারে আড়াইশো বস্তা আলু রেখেছেন পাঁচবিবি উপজেলার শিরট্রি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে ৪০ বস্তা আলু বিক্রি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, আলুর দাম বাড়ছে। তাই বাকি বস্তা পরে বের করবো।

জয়পুরহাট পৌর শহরের নতুনহাটের আলু বিক্রেতা লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আলু হিমাগারে থাকলেও বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ী-কৃষকরা। আবার মণপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা বেশি দিলে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে।

পৌর শহরের পূর্ববাজার হাটের বিক্রেতা আব্বাস আলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি মণ আলুর দাম ১৫০-২০০ টাকা বেশি। তাই আমি আলু না কিনে ফিরে এসেছি। আজ হাটের দিনও আমার দোকানে আলু নেই।

আলু ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গতবারের মতো এবার আলু মজুত করতে পারিনি। এরপরও কেনাবেচা করছি। যে দামে কিনছি তার থেকে ২-৩ টাকা লাভ করে মহাজনদের কাছে দিচ্ছি।

আলুর দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায়। তিনি বলেন, যেসব ব্যবসায়ী আলুর দাম নিয়ে কারসাজি করছেন, তাদের তালিকা করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখার আলম জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় অভিযান অব্যাহত আছে। ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে। যারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসজে/এএইচ/জেআইএম

‘কিছুদিন আগেও যে আলু ২০-২৫ টাকা কেজিতে পেয়েছি, সেই আলু এখন ১৫-২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। পেঁয়াজের মতো আলু নিয়েও ভোগান্তিতে পড়ছি’

‘যেসব ব্যবসায়ী আলুর দাম নিয়ে কারসাজি করছেন, তাদের তালিকা করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।