বরিশাল সিটি
৩ নম্বর ওয়ার্ডবাসীর প্রধান সমস্যা খোলা ময়লার ভাগাড়
বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউনিয়া পুরানপাড়ার এলাকার বাসিন্দাদের বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে খোলা ময়লার ভাগাড়। দীর্ঘদিন ধরে এই ময়লার ভাগাড়ের ফলে এখনকার বাসিন্দারা বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বসবাস শুরু করেছেন। ময়লার দুর্গন্ধের কারণে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০০৩ সালে ছয় একর জমির ওপর ময়লা ফেলার জন্য ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউনিয়া পুরানপাড়ায় জমি অধিগ্রহণ করে সিটি করপোরেশন। ২০০৪ সাল থেকে ৩০টি ওয়ার্ডের ময়লা ফেলা শুরু হয়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে পুরানপাড়া এলাকাটি ‘ময়লাখোলা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এখন পুরো বরিশালবাসীর কাছে ওই জায়গাটি ময়লাখোলা নামেই পরিচিত। তাছাড়া উন্মুক্তভাবে ফেলা বর্জ্যের ময়লাপানি পাশের সাপানিয়া খালে গিয়ে নামছে। সেই খালের পানি যাচ্ছে কীর্তনখোলায়। এতে কীর্তনখোলা নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে।
ময়লাখোলায় উন্মুক্ত স্থানে আবর্জনা ফেলার কারণে ওই এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তি ও অ্যাজমাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। স্থানীয়রা জানান, জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় ময়লা ফেলার জায়গাটি স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্ৰগতি হয়নি।
ময়লাখোলা সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ দুই দশক আগে বরিশাল প্রথম শ্রেণির পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়েছে। এত বছরে বিভাগীয় এ শহরের যেমন আয়তনে বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে লোকসংখ্যা। কিন্তু এত বছরেও এই শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গোটা নগরীর বর্জ্য এখন ফেলা হচ্ছে নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউনিয়া এলাকার বিশাল এই স্থানজুড়ে। ওই ভাগাড়ের চারপাশেই আবাসিক এলাকা। এই ময়লার ভাগাড় নিয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। দুর্ভোগ এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া করে থাকছেন। এই খোলা ময়লার ভাগাড় এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ায় এই এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান দাবি।
এছাড়া ময়লাখোলার পাশে প্রায় তিন হাজার লোকের বসবাস। পাশেই রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি কলেজসহ অন্তত ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ১০-১২টি মসজিদ। ভাগাড়ের ৪০ গজ দূরেই রয়েছে কাউনিয়া হাউজিং প্রকল্প। সেখানে অন্তত ৫০০ পরিবারের বাস।
কাউনিয়া পুরানপাড়া (ময়লাখোলা) এলাকার স্কুলছাত্র শাহারিয়ার ইসলাম শুভ্র বললো, এত দুর্গন্ধ যে ঘরে বসে খেতে পারি না। শ্বাস কষ্ট হয়, খাওয়ার সময় উটকো গন্ধ নাকে লেগেই থাকে। গন্ধে রাতে ঘুমাতেও পারি না। তাছাড়া যাওয়া-আসার পথে কুকুর ও শূকরের উৎপাতও সহ্য করতে হয়।
ময়লাখোলা এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, এই ময়লাখোলার কারণে এলাকায় মশা-মাছির উপদ্রব সারাবছর লেগেই থাকে। শীতের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। কারণ শীতের সময় পুরো ময়লাখোলার বর্জ্যে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন বাতাসে এর দুর্গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কী যে করব, বলতে পারি না। অনেকটা বাধ্য হয়ে এখানে বসবাস করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অবস্থা এমন যে এখানে কোনো আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসতে চায় না। বাড়ি বিক্রি করে দেবো, কিন্তু কেউ কিনতে চায় না। কেউ কিনতে চাইলে আবার ঠিকঠাক দাম বলে না।
নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই ময়লাখোলাই তাদের প্রধান সমস্যা। এছাড়া কাউনিয়া থানার সামনের সড়কটির বেহাল দশা।
সরেজমিনে পুরানপাড়া ময়লাখোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য পলিথিন, কাগজ, খাবারের উচ্ছিষ্টসহ নানা ধরনের ময়লার উটকো গন্ধ এলাকাজুড়ে। ময়লার স্তূপের ওপর কুকুর, শূকর, কাক ও বিভিন্ন ধরনের পাখি খাবার খাচ্ছে। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্র জানা যায়, ৫৮ বর্গকিলোমিটারের নগরীতে ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় ৬ লাখ মানুষের বাস। সেখান প্রায় ৪৫ হাজার আবাসিক, অনাবাসিক ও বাণিজ্যিক হোল্ডিং থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। বাসা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সংগ্রহ করে রাস্তার নির্দিষ্ট স্থানে রাখেন। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা রাত ৯টা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ময়লাগুলো ট্রাকে করে নিয়ে কাউনিয়া পুরানপাড়ার ময়লাখোলায় নিয়ে ফেলেন। এছাড়া ৩০টি ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণে করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখায় স্থায়ী ও অস্থায়ী নিয়োগে রয়েছেন ৯ শতাধিক কর্মী আছেন। বর্জ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ১৮টি ট্রাক ও ২২০টি বক্সভ্যান।
ময়লাখোলার দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন (পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা) রবিউল ইসলাম বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের মতো বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে শহরতলির লামছড়ি এলাকায় ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, অধিগ্রহণ করা ভূমি উন্নয়ন ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে ২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।
এমআরআর/এএসএম