কোম্পানীগঞ্জে ডিজিটাল ভূমি জরিপে ঘুস বাণিজ্য, ভিডিও ফাঁস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০৯:৪১ এএম, ০৬ জুন ২০২৩
ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরহাজারী ইউনিয়নে ডিজিটাল ভূমি জরিপে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৫ জুন) ঘুস লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৩ নম্বর চরহাজারী ইউনিয়নে ভূমি জরিপের তসদিকের (এটাস্টেশন) কাজ চলছে। এতে দায়িত্বে রয়েছেন উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার রাখাল চন্দ্র দাস, সামছুল হক, আতিকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। এরই মধ্যে ওই ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজারের অধিক খতিয়ান খুলেছেন তারা।

ফাঁস হওয়া ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক এক লাখ টাকার একটি বান্ডিল গুনে নিচ্ছেন। ওই টাকা দিচ্ছেন চরহাজারী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নুরুল আলম চাষী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনীর সোনাগাজী এলাকার নাফিজ নামের এক শিক্ষকের মালিকাধীন জমি নিজের নামে রেকর্ড করতেই নুরুল আলম চাষী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হককে ওই টাকা দিয়েছেন। এভাবে নগদ টাকা দেওয়া ছাড়া কাগজপত্র সঠিক থাকলেও জমির মূল মালিক রেকর্ড পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, স্থানীয় বেলাল আমিন নামের ভূমি জরিপের এক দালাল ওই ঘুস বাণিজ্যের মধ্যস্থতা করেন এবং গোপনে তা ভিডিও করে রাখেন। পরে সামছুল হকের সঙ্গে তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় তিনি তা ফাঁস করে দেন।

বিষয়টি চরহাজারী ইউনিয়নের বেলাল আমিনকে জিজ্ঞেস করা হলে তার সামনে টাকা লেনদেনের বিষয়টি জাগো নিউজের কাছে স্বীকার করেন। তবে কোন বিষয়ে টাকা লেনদেন হলো তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

সোনাগাজী এলাকার ভুক্তভোগী শিক্ষক নাফিজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ারা রেকর্ড, খাজনার রসিদসহ সব কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও টাকার বিনিময়ে নুরুল আলম চাষী অবৈধভাবে রেকর্ড করে নিতে ওই টাকা লেনদেন করেছেন। আমি বিষয়টি নোয়াখালী জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

জানতে চাইলে জরিপ কর্মকর্তা সামছুল হককে এক লাখ ৭ হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নুরুল আলম চাষী। তিনি দাবি করেন, ওই টাকা ঘুসের নয়। কুমিল্লার এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তার পরিবারের জন্য টাকাগুলো পাঠিয়েছেন। যা সামছুল হকের বাড়ির পাশে হওয়ায় তার মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে কুমিল্লার টাকা নোয়াখালীতে কেন এলো, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি নুরুল আলম।

অভিযুক্ত উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সামছুল হক টাকা গুনে নেওয়ার ভিডিওটি তার বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনিও দাবি করেন, তার বাড়ির পাশের এক প্রবাসীর পরিবারকে পৌঁছে দিতে ওই টাকা তাকে দেন নুরুল আলম চাষী। তাৎক্ষণিকভাবে কথিত ওই প্রবাসীর নাম জিজ্ঞাসা করলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরে জানাবেন বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

স্থানীয় চরহাজারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন সোহাগ ভূমি জরিপে ঘুস লেনদেনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার কাছেও বহু অভিযোগ এসেছে। তারা আমার ইউনিয়ন পরিষদে বসে আমার এলাকার জনগণের পকেট কাটছেন, যা মেনে নেওয়া যায় না। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবা উল আলম ভুইঁয়া জাগো নিউজকে বলেন, ভূমি জরিপে নানান কথা শুনে আসছি। যেসব অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তা সমাধানও করে দিয়েছি। এখনো কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আবদুল হাই গাজী জাগো নিউজকে বলেন, চরহাজারী ইউনিয়নের ৫৫-৬০ শতাংশ এটাস্টেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ হতে আরও ৩-৪ মাস সময় লাগবে। সেখানকার কাজের দায়িত্ব ওই কর্মকর্তাদের। অনেক সময় তারা আমাদের কথাও শোনেন না। ভিডিওর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।