জলবায়ু পরিবর্তন

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

আমিন ইসলাম জুয়েল আমিন ইসলাম জুয়েল , জেলা প্রতিনিধি ,পাবনা
প্রকাশিত: ০৯:৫২ পিএম, ০৫ জুন ২০২৩

জলবায়ুর লাগামহীন পরিবর্তনে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাবনার কৃষকরা। সময়মতো বৃষ্টি হচ্ছে না। অসময়ে দেখা দিচ্ছে খরা। এতে চাষাবাদে খরচ বাড়লেও ফলনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ অবস্থায় প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম ফসলের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘায়িত দাবদাহ ও খরার কারণে ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফসলে রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন আরও নিচে নেমে যাচ্ছে।

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

প্রবীণ চাষিরা বলছেন, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের আবহাওয়া-প্রকৃতির আবহমানকালের চিরচেনা রূপ ও বৈশিষ্ট্য পাল্টে যাচ্ছে। ষড়ঋতুর চরিত্র হারিয়ে যাচ্ছে।

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

তারা বলেন, আগে বড়জোর জানুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হতো শীত। ঠান্ডা পড়তে শুরু করতো অক্টোবরের শেষের দিক থেকে। এখন সব পাল্টে যেতে শুরু করেছে। বর্ষা আসার কথা ৮ জুন। কিন্তু জুনেই চলছে তীব্র দাবদাহ। বিগত কয়েক বছর ধরেই বৃষ্টি নামছে না সেভাবে।

এবার চাষিরা ঠিকমতো পাট আবাদ করতে পারেননি বৃষ্টির অভাবে। যারা আবাদ করেছেন তাদের সেচ দিয়ে করতে হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে বহুগুণ। গতবছরও পানির অভাবে পাটের জাগ দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছিল চাষিদের। ধান চাষেও অতিরিক্ত সেচ লাগছে। এতে বাড়ছে খরচ। তবে উৎপাদন সে অনুপাতে হচ্ছে না।

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

মৌসুমি পুকুরগুলোতে এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টির পানি জমলে চাষিরা মাছ ছাড়েন। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। বৃষ্টিপাত শুরু হতেও দেরি হচ্ছে। এতে পোনা ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। দেরিতে পোনা ছাড়ার পরও অনেক পুকুর শুকিয়ে গেছে তাড়াতাড়ি। ফলে চাষের সময় কমে যাচ্ছে। এতে মাছ বড় হওয়ার আগেই ছোট মাছ বাজারজাত করতে হচ্ছে চাষিদের।

কয়েকজন পুকুর মালিক জাগো নিউজকে বলেন, স্বল্প গভীর পুকুরে অধিক তাপমাত্রায় মাছ সহজে রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। সেচ দিয়ে মাছ চাষ করতে গিয়ে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

পাবনার আতাইকুলা থানার গাঙ্গহাটি গ্রামের চাষি আবু জাফর, বামনডাঙ্গা গ্রামের মোন্নাফ আলী জানান, তারা ছোটবেলা থেকে কৃষিকাজ করছেন। তবে এখন কৃষিকাজ করতে গিয়ে তারা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তারা বলেন, যখন বৃষ্টির প্রয়োজন তখন বৃষ্টি হচ্ছে না। আবার যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন আর বৃষ্টি থামে না। এভাবে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, দাবদাহ কৃষিকাজকে সংকটে ফেলে দিয়েছে।

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুরের কৃষক ও কৃষিতে এআইপি (এগ্রিকালচারাল ইমপর্টেন্ট পারসন) শাহজাহান আলী বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কৃষি সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পাবনায় দোতলা কৃষির উদ্ভাবক অধ্যাপক জাফর সাদেক জাগো নিউজকে বলেন, দেশে ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলায় তাপসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সেসব জাতগুলো নিয়ে গবেষণার বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। কৃষকদের প্রণোদনার মাত্রা বাড়ানোর মাধ্যমেও জলবায়ুসহিষ্ণু জাত সম্প্রসারণে তাদের আকৃষ্ট করতে হবে।

বাড়ছে খরচ, কমছে উৎপাদন

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপপরিচালক ড. জামাল হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এতে কৃষক ও কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষিকে এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।

তিনি বলেন, অগ্রাধিকারভিত্তিতে উচ্চ তাপমাত্রাসহনশীলসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে চাষের উপযোগী ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে আমাদের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এরইমথ্যে অনেক সফলতা এসেছে।

এসআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।