সুন্দরবনে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে কঠোর হচ্ছে বনবিভাগ
প্রায় সারা বছরই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারেন দর্শনার্থীরা। অনেকে তিনদিনের পাস নিয়ে বনের মধ্যে অবস্থান করেন। এসময় খাবার ও পানির জন্য ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার করেন তারা। সেগুলো অনেকে নদীতে বা বনের মধ্যে ফেলে আসেন। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাণিকূলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে সুন্দরবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন পরিবেশবিদ ও গবেষকরা।
সম্প্রতি সুন্দরবনে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে তৎপরতা বাড়িয়েছে বনবিভাগ। বনের অভ্যন্তরে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে সুন্দরবনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত মে মাসে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় প্লাস্টিক সামগ্রী ফেলার অপরাধে কয়েকদিনের জন্য পর্যটকবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই অপরাধে একটি ট্রলার ও তার মালিককে আটক করে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়। অপর একজনকে জরিমানা করা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তবে এর আগের পাঁচ বছরে এ অপরাধে কোনো মামলা, জরিমানা বা কাউকে আটক করা হয়নি।
বুড়িগোয়ালিনি ঘাটের ট্রলার মালিক আবদুল হালিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে ট্রলারে ভ্রমণের সময় পর্যটকদের প্লাস্টিক বর্জ্য নদীতে বা বনের ভেতর না ফেলার জন্য সতর্ক করা হয়। প্রতিটি ট্রলারে এসব সামগ্রী ফেলার জন্য ডাস্টবিন রাখা হয়। তবে সুন্দরবনের পাশেই লোকালয় রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার হয়। সেগুলো নদীতে ফেলে দিলে জোয়ার-ভাটায় ভেসে বনের মধ্যে চলে আসে। আর দোষারোপ করা হয় আমাদের।’
মুন্সিগঞ্জ ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ট্রলারের কর্মচারীরা বনের মধ্যে ও নদীতে প্লাস্টিক সামগ্রী না ফেলার বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকেন। সমিতির পক্ষ থেকেও ট্রলার মালিকদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে অনেক সময় নতুন নতুন পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে এসে আমাদের অজান্তে না বুঝেই প্লাস্টিক সামগ্রী ফেলে পরিবেশ নষ্ট করেন। এখানে শুধু আমাদের দোষারোপ করলে হবে না, পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে।’
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, সুন্দরবনের এ অংশ দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক ট্রলারযোগে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। এসময় তারা সঙ্গে করে প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের প্যাকেটে খাবার, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি নিয়ে যান। সেগুলো ব্যবহারের পর নদীর পানিতে বা সুন্দরবনের মধ্যে ফেলে আসেন। ফলে সুন্দরবনে ইকো সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা ট্রলার মালিকদের বারবার সতর্ক করেছি। কিছুদিন আগে এ অপরাধে একটি ট্রলার ও তার মালিককে আটক করা হয়। পরে একটি মামলা দেওয়া হয়। একই অপরাধে একজনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) একেএম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সুন্দরবনের নদীতে প্লাস্টিকসামগ্রী ফেলা সম্পূর্ণ নিষেধ। আমাদের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে এসব সামগ্রী ফেলার জন্য ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা আছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে প্লাস্টিক সামগ্রীর বিষয়ে কঠোর হওয়ার জন্য একটি নির্দেশনা এসেছে। সুন্দরবন ও নদীতে প্লাস্টিকসামগ্রী ফেললে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘বর্তমানে তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটকসহ জেলে ও কাঁকড়া ধরা নৌকা প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও পাস পারমিট দেওয়া শুরু হবে। তখন প্রতিটি ট্রলারে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করে দেখার পর সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। একইসঙ্গে আগত পর্যটকদের সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ ও সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/এমএস