চুয়াডাঙ্গা
কড়া রোদে অসহ্য গরম, দেখা নেই বৃষ্টির
এক সপ্তাহ ধরে দাবদাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গার মানুষ। জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলেও জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাসরিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অসহ্য গরম অনুভূত হওয়ার কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি। এ পরিস্থিতি থাকবে আরও কয়েকদিন। দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও এ অঞ্চলে দু-তিনদিনের মধ্যে তেমন সম্ভাবনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুনে এসেও তাপমাত্রা বাড়ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে।’
বুধবার (৩১ মে) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে মঙ্গলবার (৩০ মে) ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এর আগে গত এপ্রিল ও মে মাসে একটানা অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ ছিল এ জেলার মানুষ। ২৩ মে ১৫ মিলিমিটার, ২৫ মে ১৩ মিলিমিটার ও সবশেষ শনিবার (২৭ মে) ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এসময় কালবৈশাখীও বয়ে যায় এ জেলায়। তারপরও কমেনি গরম। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় মূলত এ অসহ্য গরম অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা যদি ৩৮-৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০-৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে তীব্র বা প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে তা হয় চরম বা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়ার বাসিন্দা ইমরান শেখ বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে কিছুই করা যাচ্ছে না। বিকেল হলেই আকাশ ঘন হয়ে আসে। মনে হয় এই বুঝি বৃষ্টি হবে। কিন্তু সকাল হলে আবার সেই অসহ্য গরম।’
চা দোকানি শাহজালাল বলেন, ‘মানুষ দোকানের বেঞ্চে শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে। তবে গরমে বিক্রি কম। তাড়াতাড়ি এই গরম কমুক।’
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্র মেহেরাব্বীন সানভী বলেন, ‘দিনে বাড়িতে না থেকেও এদিক-সেদিক ঘোরা যায়। কিন্তু রাতেতো ঠিকই ঘরে যেতে হয়। রাতে ঘরে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। বই নিয়ে বসার উপায় নেই। গরমে ঠিকঠাক পড়াশোনা করাও যাচ্ছে না।’
এদিকে, দাবদাহের কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে গরমজনিত কারণে আড়াইশর বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরাম।
তিনি বলেন, এ আবহাওয়ায় বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে হবে। তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই যতটা সম্ভব ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে।
হুসাইন মালিক/এসআর/এএসএম