সাবেক নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়ে আ’লীগ প্রার্থীর সভা
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিভিন্ন নির্বাচনে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন এরকম ১০-১২ জন স্কুল ও কলেজের শিক্ষককে নিয়ে সভা করেছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সুন্দর আলী। সভাটি নিজের ফেসবুকে লাইভও করেছেন ওই প্রার্থী। এ ঘটনায় পৌরসভাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) রাতে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আড়াইহাজার পৌরসভার আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুন্দর আলীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনে কাজ করার অঙ্গীকার করেন উপস্থিতরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুন্দর আলী প্রচারণা সভা করেন। সভায় হাজী বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন বুলবুল, একই কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বাবু, প্রভাষক মোজাম্মেল হক সুলতানসাদী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক লোকনাথ পোদ্দার, একই কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বাচ্চু, ইউনাইটেড স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ, রোকনউদ্দিন গালস ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন রতন, একই কলেজের আরেক সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, আড়াইহাজার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া স্বপন, জাহানারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক, উজান গোবিন্দী বিনাইরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিমসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা নৌকাকে বিজয়ী করতে কীভাবে কাজ করা যায় তা তুলে ধরেন। সবাই যেকোনো উপায়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে শপথ নেন।
অনুষ্ঠানে লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, হাজী বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজেন সহকারী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন বুলবুল তার বক্তব্যে বলছেন, ‘সুন্দর আলী আমার বন্ধু মানুষ। বন্ধুর জন্য আমাদের এই শিক্ষক টিম নাইনটি ফাইভ পার্সেন্ট ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে বিজয়ী করবো।’ এসময় উপস্থিত শিক্ষকরা হাততালি দিয়ে একমত পোষণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভায় উপস্থিত শিক্ষকরা বিগত নির্বাচনগুলোতে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রিসাডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। সভায় তারা উপস্থিত থাকায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আলী মোল্লা বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে বারবার দাবি জানাচ্ছি। আমরা লক্ষ্য করছি আড়াইহাজারে বেশকিছু শিক্ষক-অধ্যাপক প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর হয়ে ভোট চাইছেন। নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারে কাজ শুরু করেছেন। এরাই আবার নির্বাচনে প্রিসাডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। আমি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এতে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
একই কথা বলেন অপর দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ প্রতীকের হাবিবুর রহমান ও মোবাইল প্রতীকের মামুন অর রশীদ। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
জানতে চাইলে আড়াইহাজার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইয়াহিয়া স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে আমাদের একটি সভা হয়েছিল। সেই সভায় আমরা শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলাম। তবে সব শিক্ষক না। সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুন্দর আলীকে জয়ী করানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মেয়র প্রার্থী সুন্দর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, ‘আমি একটি মিটিংয়ে আছি। পরবর্তীতে আপনার সঙ্গে কথা বলছি।’ এ কথা বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।
আড়াইহাজার পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা রবিউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে কোনো প্রার্থী সভা করতে পারেন না। সরকারি হোক আর বেসরকারি হোক এটার সুযোগ নেই। যদি কেউ করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিষয়টা দেখছি।’
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/জিকেএস