পাহাড়ের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা পেলেন মোড়া তৈরির উপকরণ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ৩০ মে ২০২৩

বেশ কয়েকবছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার হাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন। ছেলেমেয়েরা বিয়ে করে যার যার মতো আলাদা থাকছেন। প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে সুফিয়ার বসবাস। দীর্ঘ বছর ধরে মোড়া তৈরি করে জীবিকানির্বাহ করেন এ বৃদ্ধা।

কেবল সুফিয়া খাতুনই নয়, মোড়া তৈরি করে জীবিকানির্বাহ করেন স্বামী পরিত্যক্তা খালেদা বেগম, বিধবা রোকেয়া বেগম, হাসিনা বেগম ও হতদরিদ্র আনোয়ারা বেগমসহ শতাধিক নারী। মোড়া তৈরি করে জীবিকানির্বাহ করলেও অর্থ সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের।

এমন পরিস্থিতিতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ৪৮ জন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌসী পারভীন। সহায়তার অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত এসব নারীর প্রত্যেককে ১০ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের বেত (রগ) ও টায়ার দেন তিনি।

মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে মাটিরাঙ্গার হাতিয়াপাড়ায় উপকারভোগী নারীদের হাতে মোড়া তৈরির উপকরণ তুলে দেন ফেরদৌসী পারভীন। এসময় খাগড়াছড়ির নারী উদ্যোক্তা বীনা ত্রিপুরা ছাড়াও উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সোমবার খাগড়াছড়ির নয় মাইল এলাকায় ৫২ জন পাহাড়ি নারীকে পাঁচ কেজি করে কোমর তাঁত বোনার সুতা দেন তিনি।

মোড়া তৈরির উপকরণ পেয়ে সুফিয়া খাতুন বলেন, ছেলেরা আমার খবর রাখে না। মেয়েরা স্বামী নিয়ে নিজের সংসারে থাকে। এই বয়সেও মোড়া বিক্রির টাকাতেই নিজের ভরণপোষণ করছি। কিন্তু আর্থিক সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে কষ্ট হতো। ১০ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ পেয়েছি। এখন আমার একটা পুঁজি তৈরি হলো।

বিধবা রোকেয়া বেগম বলেন, আল্লাহ আমাদের মতো গরিবদের সাহায্যের জন্য ম্যাডামকে পাঠিয়েছেন। সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

অপর বিধবা হাসিনা বেগম বলেন, ম্যাডাম যা করলেন আজকের দুনিয়ায় কেউ কারও জন্য করে না।

কোমর তাঁত বোনার সুতা পাওয়া হেমালিকা ত্রিপুরা বলেন, ম্যাডামের দেওয়া সুতায় কোমর তাঁত বুনে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরাও তাদের মতো করে ঘুরে দাঁড়াবো। তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। তার এ দান আমরা কখনো ভুলবো না।

শিক্ষকতা করার সময়ও নিজের বেতনে মানুষের জন্য কাজ করার কথা জানিয়ে ফেরদৌসী পারভীন বলেন, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য কিছু করার তাগিদ সবসময়ই অনুভব করি। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতেই আমি নিজ উদ্যোগে এসব কাজ করছি। একজন নারী যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে এমন ভাবনা থেকেই প্রান্তিক জনপদের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতেই এ প্রচেষ্টা।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।