অনাবৃষ্টি

আমের আকার ছোট, চাষির কপালে চিন্তার ভাঁজ

আব্বাস আলী
আব্বাস আলী আব্বাস আলী , জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ১৭ মে ২০২৩

কয়েক বছরের ব্যবধানে উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁয় বেড়েছে আম বাগান। বিভিন্ন জাতের সুমিষ্ট আমচাষ হচ্ছে এ জেলায়। তবে এ মৌসুমে শুরু থেকেই অনাবৃষ্টির কারণে আমচাষিদের কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরও মিলছে না বৃষ্টির দেখা। অনাবৃষ্টির কারণে আম ঝরে পড়ছে। সেইসঙ্গে আমের আকারও ছোট হয়ে আসছে। কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবার। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন আমের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সাধারণত গুটি জাতের আম আগেই পাকতে শুরু করে। আগামী ২২ মে গুটি আম পাড়া শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আম পাড়া হবে।

বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্মীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার আংশিক এলাকায় একসময় বৃষ্টিনির্ভর একটিমাত্র ফসল আমন ধান হতো। তবে এখন ধান ছেড়ে মানুষ আম বাগানে ঝুঁকছেন। এ মৌসুমে খরায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আম বাগানে সেচ দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে বোটার রস শুকিয়ে আম ঝরে পড়ছে। সেইসঙ্গে আমের আকারও ছোট হয়ে আসছে। এ অবস্থায় আম রক্ষায় চাষিরা দূর-দূরান্ত থেকে পানি এনে গাছে স্প্রে করছেন।

এছাড়া আম ঝরে পড়া রোধে ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। চাষিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। আর কিছুদিনের মধ্যে আম সংগ্রহ শুরু হবে।

সাপাহার উপজেলার লালচান্দা গ্রামের আমচাষি আলাউদ্দিন বলেন, ১৬ বিঘা জমিতে বারী-৪ ও আম্রপালি জাতের আম বাগান রয়েছে। অনাবৃষ্টিতে এ বছর বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। গত ৪০ বছরে এমন খরা ও অনাবৃষ্টি দেখিনি। বরেন্দ্র এলাকায় পানি স্বল্পতা। তারপরও যতটুকু সম্ভব দূর থেকে পানি নিয়ে এসে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন আর পানি নেই। আম প্রচুর পরিমাণে ঝরে গেছে। আমের আকারও ছোট হয়ে গেছে। লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

একই গ্রামের আমচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, আম ঝরে পড়া বন্ধ করতে ভিটামিন স্প্রে করা হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রচণ্ড খরায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আম্রপালি আমের আকার গত বছর প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম ছিল। এবছর ১৫০ গ্রামের মতো হয়েছে। আকার ছোট হয়েছে এবং ফলনও কম হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত বছর ৬০টি আম দিয়ে এক ক্যারেট পূরণ হয়েছে। এবছর প্রায় ৮০টি আম দিয়ে এক ক্যারেট পূরণ হবে। ফলন কম খরচ বেশি পড়ছে। তবে এ বছর শুরু থেকে আমের দামও বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাপলা খাতুন বলেন, এ উপজেলায় ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। হেক্টর প্রতি ১৪ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। তবে প্রচণ্ড খরায় আম কিছুটা ঝরে পড়ছে। আমের আকার ছোট হয়ে গেছে। সকালে বাগানে পানি সেচ দেওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদি সেচ দেওয়া না যায় গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আম উৎপাদনে অন্যান্য জেলাকে ছাড়িয়ে গেছে নওগাঁ। গত বছর ৭৭ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে। এ বছর প্রায় ৪০০ মেটিক টন রপ্তানির সম্ভবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আমের ব্র্যান্ডিং করার জন্য প্রচুর প্রচার-প্রচারণাও করা হয়েছে। এতে করে সারাদেশে এ জেলার আম ব্র্যান্ডিং হিসেবে পরিচিতি পাবে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।