বছরে দু’বার নিষেধাজ্ঞায় অস্তিত্ব সংকটে সমুদ্রের জেলেরা
অডিও শুনুন
ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে সপ্তাহজুড়ে তীরে বসে থাকার পর সমুদ্রে মাছ শিকারে গেলেও ফের ৪-৫ দিনের মধ্যে তীরে ফিরতে হবে জেলেদের। কারণ আগামী ২০ মে থেকে ৬৫ দিনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। তবে জেলেদের দাবি সরকার যেন বছরে দুটি অবরোধ উঠিয়ে একটি অবরোধ দেয়। তা না হলে জেলেদের বছরের পর বছর ঋণের বোঝা বেড়েই যাচ্ছে।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ মে থেকেই আবহাওয়া অফিসের তথ্য পেয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেন অধিকাংশ জেলে। পরে ১৫ তারিখ সমুদ্রে গেলেও আবার ১৯ তারিখের মধ্যে তীরে ফিরতে হবে তাদের। বছরে দু’বার অবরোধ, প্রতিমাসে বৈরি আবহাওয়ার প্রভাব, সমুদ্রে মাছের আকাল সবমিলিয়ে ভালো যাচ্ছে না তাদের জীবন।
তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, জেলেদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হচ্ছে। তাদের এই ৬৫ দিনের অবরোধের জন্য সরকার ৫৬ কেজি করে চাল প্রতি জেলের জন্য বরাদ্দ করেছে। এছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে।
এফবি জান্নাত ট্রলারের মাঝি কুদ্দুস মিয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ একটি দাবি করে আসছি, ৬৫ দিনের অবরোধকালে আমরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা আমাদের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে। কিন্তু সরকার এখনো এর কোনো প্রতিকার করতে পারলো না। আমাদের দাবি, এই সময়ে আমরাও মাছ শিকার করবো, নয়তো তাদেরও প্রবেশ বন্ধ করা হোক।
এফবি বন্ধন ট্রলারের মাঝি সরোয়ার জানান, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৮০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ৬৫ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধতো দূরের কথা আবারও ঋণী হওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছে।
এফবি ভাই-ভাই ট্রলারের মালিক মো. খোকন জাগো নিউজকে বলেন, আড়তদারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা দাদোন নিয়ে দুইটা ট্রলার তৈরি করেছি। ২ বছরে এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। এর উপর আবার অবরোধ, এখন এই পেশায় টিকে থাকা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।
সাতভাই ফিসের পরিচালক মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ বছরে দু’বার নিষেধাজ্ঞা, বৈরি আবহাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।
কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, সরকার জেলেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তবে সেটা যদি মৎস্য পেশাকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে তাহলে এই পেশায় সংকট দেখা দেবে। তাই আমাদের দাবি এই ৬৫ দিনের অবরোধকে কমিয়ে আনা হোক।
এদিকে মঙ্গলবার (১৬ মে) পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এই নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে কার্যকর করতে সচেতনতামূলক সভা করে নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগ।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, এ অবরোধের পর সাগরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ার আশা প্রকাশ করছি। এছাড়া এ নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে উপজেলায় কর্মহীন ইলিশ শিকারী নিবন্ধিত জেলেদের জন্য এরইমধ্যে ৫৬ কেজি চাল চলে এসেছে যা জুন মাসের প্রথম দিকে দেওয়া হবে।
নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন বলেন, এই ৬৫ দিনের অবরোধকে সঠিকভাবে পালন করতে আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছি। এছাড়াও কোস্ট-গার্ড, নৌবাহিনী, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর থাকবে যাতে কোনো অসাধু চক্র এই অবরোধকালীন সময়ে সমুদ্রে না নামতে পারে।
এফএ/জিকেএস