ভুট্টা তোলায় শ্রমিক সংকট, দাম নিয়ে হতাশ কৃষক
লালমনিরহাটে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। এ অবস্থায় ভুট্টা তোলার ধুম পড়েছে। তবে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। মজুরি বেশি দিয়েও সহজে মিলছে না শ্রমিক। গত বছরের চেয়ে এবার ভুট্টার দামও কম। আবার উৎপাদন খরচও বেশি হয়েছে। এসব নিয়ে হতাশ কৃষক।
ভুট্টা চাষিরা বলছেন, এবছর উচ্চমূল্যে সার-বীজ তেল কিনে ভুট্টা চাষ করেছেন। একসময় তিন বেলা খাবারের বিনিময়ে কৃষিকাজ করে নেওয়া যেত শ্রমিকদের কাছ থেকে। কিন্তু বর্তমানের চিত্রটাই ভিন্ন। বাজারের দ্রব্যমূল্য বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমের মূল্য। তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি ৫০০-৬০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। তবুও ভুট্টা তোলার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে এতকিছুর পরও বাজারে ভুট্টার দামই নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ভুট্টা কিনে গোডাউনে কয়েক মাস রাখার পর বিক্রি করলে তারাই লাভবান হবেন। প্রতিবছর কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ শুকনো ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। গতবছর প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ১২০০-১৫০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, গড্ডিমারী, বড়খাতা ফকিরপাড়া, পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ও জোংড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জমিতে ভুট্টা পেকেছে। শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে ভুট্টা তুলছে অনেক কৃষক। আদিতমারী ও কালিগঞ্জ উপজেলা থেকেও কিছু শ্রমিক ভুট্টা তুলতে এসেছেন। ৫-১০ শ্রমিক জোটবদ্ধভাবে এক বিঘা জমির ভুট্টা তুলে নিচ্ছে ২৫০০-৩ হাজার টাকা।
উপজেলার বড়খাতা গ্রামের ভুট্টা চাষি জোনাব আলী বলেন, উচ্চমূল্য দিয়ে সার-বীজ ও তেল কিনে ভুট্টার চাষ করেছি। বর্তমান ভুট্টার দাম নেই। এদিকে ভুট্টা তোলার জন্য শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও বেশি দাম চাচ্ছে তারা।
ফকিরপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, ভুট্টার বীজ কিনেছি ৭০০ টাকা কেজি দরে। ভুট্টা রোপণে সার কিনতে হয়েছে সিরিয়াল দিয়ে। পটাশ সার পাওয়া যায়নি। তেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তাই দিন দিন কৃষক মরতে বসেছি।
হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি উপ-সহকারী লতিফুল বারী জাগো নিউজকে বলেন, একদিকে বোরো ধান অন্যদিকে ভুট্টা। এ দুটি ফসল একই সময় ওঠার কারণে অত্র এলাকাজুড়ে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেক শ্রমিক মাঠে গিয়ে কাজ করতে পারছে না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার প্রচুর উৎপাদন হয়েছে ভুট্টার। জেলায় প্রতি একর জমিতে ১১০-১১২ মণ ভুট্টা পাচ্ছেন কৃষকরা। ভুট্টা চাষিরা যদি রিপার মেশিনের সাহায্য নেন তাহলে বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হবে না। এতে শ্রমিক সংকট কাটিয়ে উঠবে। রিপার মেশিনের মূল্য এখন ১ লাখ ৮০ হাজার মাত্র।
দাম নিয়ে হামিদুর রহমান বলেন, শুরুতেই ভুট্টার দাম কম থাকলেও বর্তমানে তা দিন দিন বাড়ছে। আশাকরি কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।
এসজে/এএসএম