ঘূর্ণিঝড় মোখা
‘বাড়িঘরের চিন্তায় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছে করে না’
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ক্ষয়ক্ষতিসহ জানমাল রক্ষায় ফেনীর সোনাগাজীতে ৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা জানিয়ে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু ঝুঁকি জেনেও বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে তেমন একটা আগ্রহী নন উপকূলবাসী।
উপজেলার সদর ও চর চান্দিয়া ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জেলে ও শ্রমজীবী মানুষ বলছেন, প্রতিনিয়ত তারা ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। প্রশাসন যদি ঘরবাড়ি ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাহলে আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হবেন তারা।
রোববার (১৪ মে) সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিনটি লাল পতাকা উঠিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের বিপৎসংকেত দেখানো হচ্ছে। চলছে সচেতনতামূলক প্রচারণা। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিলেও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখনও খালি পড়ে আছে।
কোনোভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না স্থানীয়রা। তবে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রের নিচে খালি জায়গায় বেশ কিছু গবাদিপশুকে নিরাপদে এনে রাখা হয়েছে।
উপজেলার জেলেপাড়ার বাসিন্দা হরলাল জল দাস বলেন, সারা বছর ঝড়-তুফানসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে নদী ও সাগরে মাছ ধরি। এখন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাড়িতে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তেমন লাভ নেই। এছাড়া সেখানে গিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হবে। বাড়িঘরের চিন্তায় ঘুম হয় না। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছে করে না।
চর খোন্দকার এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন জলদাস বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে। ৬০ বছর বয়সে কত ঘূর্ণিঝড় দেখেছি, এসবে আমরা ভয় পাই না। ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে, ঘরে তো কিছুই থাকবে না। সব লুট হয়ে যাবে। বাড়ির পাশের নদীর তীরে নৌকা-জালসহ লাখ টাকার সম্পদ পড়ে আছে। এসব ছেড়ে তো অল্প কটা চিড়া-মুড়ির জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারি না।
জেলেপাড়ার আরেক বাসিন্দা ফুল রানী জলদাস বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই, নিরাপত্তা নেই। তাই ঘরই ভালো। পানি না ওঠা পর্যন্ত আমরা বাড়িতে আছি।
উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার সিপিপির দল নেতা নুর নবী বলেন, শুক্রবার বিকেল থেকে এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। এছাড়া গবাদিপশু নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রচারণা চালাচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনাসহ জনগণকে সতর্ক করার লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সোনাগাজীতে ৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে এবং ১৪টি চিকিৎসকদল, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। দুর্যোগকালীন উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য সিপিপির দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছেন।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির কর্মসূচির (সিপিপি) সহকারী পরিচালক মুনীর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর থেকে উপজেলার সর্বত্র সিপিপির সদস্যরা কাজ করছেন। প্রতিটি এলাকায় সিপিপির সদস্যদের সহায়তায় জনগণকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সর্তক করে জানমাল ও গবাদিপশুর নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় আসায় উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা অনেকে আতঙ্কে আছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেদের দুর্যোগকালে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসজে/এমএস