যৌন হয়রানি, পিয়নের ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ ৫ ছাত্রীর
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় শ্রেণিকক্ষেই পিয়নের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে পাঁচ ছাত্রী। পিয়ন হুমায়ুন কবীরের হরহামেশা এমন ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রধান শিক্ষককে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন হুমায়ুন কবীর বেশ কিছুদিন ধরে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়াসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করে আসছেন। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে কয়েকজন অভিভাবক জানালেও তিনি শোনেননি। একপর্যায়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী একাধিক ছাত্রী জানায়, পিয়ন হুমায়ুন কবীর শিক্ষক না হয়েও শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন। মারধরের ভয় দেখিয়ে শিক্ষক-অভিভাবকদের না জানাতে শাসিয়ে দেন।
এক অভিভাবক বলেন, ‘পিয়ন হুমায়ুনের কর্মকাণ্ডে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। আমার স্ত্রী বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানালেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে পরিবার শঙ্কার মধ্যে থাকে। শুধু তাই নয়, স্কুল সংলগ্ন বাড়ির খামারে গরু-ছাগল ও মুরগির খামারে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যস্ত রাখেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
আরেক অভিভাবক বলেন, ‘অনেক মেয়ে লজ্জায় বলতে পারে না। আমার মেয়ে স্কুলে যেতে না চাইলে বিষয়টি প্রকাশ হয়। এভাবে একে একে একাধিক অভিভাবক মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অপর অভিভাবক জানান, ঘটনা শোনার পর তার মেয়েসহ চার-পাঁচজন ছাত্রী গত সাত-আট দিন ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে আগেও যৌন নিপীড়নের অভিযোগের তদন্ত চলমান আছে। তবে গরু-ছাগলের খামারের কাজে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
অভিযুক্ত পিয়ন হুমায়ুন কবীরের দাবি, পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অতীতেও নানাভাবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা আক্তার তানিয়া জানান, অভিযোগের তদন্ত করতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুজন কান্তি শর্মা জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার তদন্তে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী ছাত্রী, তাদের অভিভাবক ও অভিযুক্ত পিয়নের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষককে কর্মস্থলে না পাওয়ায় তাকে রোববার সকালের মধ্যে হাজির হতে জানানো হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
ফেনী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসজে/এমএস