স্মরণকালের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস ঘটাতে পারে ‘মোখা’

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ১৩ মে ২০২৩
ফাইল ছবি

অডিও শুনুন

অতিপ্রবল রূপ নেওয়া ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে উখিয়া-টেকনাফের আশ্রিত রোহিঙ্গা বসতি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মোখা সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালীর সোনাদিয়া, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, ঈদগাঁওয়ের গোমাতলী, পোকখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস ঘটাতে পারে ধারণা স্থানীয়দের। পাহাড়ধস ও জলোচ্ছ্বাসে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও এড়িয়ে যাচ্ছেন না অতীতের ভুক্তভোগীরা।

শনিবার (১৩ মে) দুপুর থেকে কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে টেকনাফসহ সেন্টমার্টিন ও উপকূল এলাকায়। শুক্রবার (১২ মে) রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে মোখায় সম্ভাব্য ক্ষতি ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে দ্বীপের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। সাগরে জোয়ারের পানি বেড়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে হালকা বাতাস বইছে। যারা ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দেখেছেন তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দ্বীপে বড় কোনো দুর্ঘটনা হলে পালিয়ে যাওয়া রাস্তা নেই। চতুর্দিকে সাগর। এবার স্মরণকালের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস ঘটাতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা। তবে সাইক্লোন শেল্টার থাকায় আপাতত আমরা নিরাপদ বোধ করছি।’

বাহারছড়া উপকূলের বাসিন্দা মো. জুবায়ের বলেন, আমাদের গ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দারা পাহাড়ধসের আশঙ্কায় রয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, বিগত ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের এলাকায় পাহাড়ধসে অনেক লোক মারা গেছেন। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা শুনে আমরা খুব আতঙ্কে আছি। বিশেষ করে পাহাড়ে থাকা মানুষগুলো অনিরাপদ।

উনচিপ্রাং ক্যাম্পের মাঝি (নেতা) কামাল হোসাইন বলেন, ক্যাম্পের পাহাড়ের পাশে অথবা পাহাড়ের ওপরে থাকা রোহিঙ্গারা আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন। ভারি বৃষ্টি হলেও পাহাড়ধস হয়। কিন্তু ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মোখার ভয়াবহতা শুনে আমরা খুব ভয়ে আছি।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্বীপবাসীকে সতর্ক করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মানুষকে নিরাপদে রাখতে স্কুল, মাদরাসা ও সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান চেয়ারম্যান মুজিব।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, পাহাড়ি এলাকাসহ সবখানে মাইকিং করে পাহাড় ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে নিরাপদে মানুষদের সরে আসতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে।

টেকনাফ ইউএনও মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌবাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। হটলাইন খোলা হয়েছে ।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্যাম্পগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ক্যাম্পের স্কুল ও মসজিদ-মাদরাসাসহ মজবুত সেন্টারগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ক্যাম্পে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, রেডক্রস, মেডিকেল টিম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দমকল বাহিনী, বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মীসহ রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরাও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নগদ অর্থ ও শুকনা খাবার।

বিগত ঘূর্ণিঝড়ে টেকনাফসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে ২০ জনের বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। আর কক্সবাজারের অন্য জায়গায় মারা যান অর্ধশতাধিক। এবার পাহাড়ধসে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোটায় রাখতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে অতিভারি বর্ষণের কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ১৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় মোখার তাণ্ডব শুরু হতে পারে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (২৮৯ মিলমিটার) বৃষ্টি হতে পারে। অতিভারি বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি শনিবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার (১৪ মে) ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আজ রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।

এসআর/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।