প্রশংসায় ভাসছেন ডা. ফরিদ এইচ খান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৭:৪৩ এএম, ০৮ মে ২০২৩
ছবি- সংগৃহীত

নওগাঁর পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. ফরিদ এইচ খান মৃতপ্রায় নবজাতককে সুস্থ করে প্রশংসায় ভাসছেন। ওই নবজাতক এখন সুস্থ এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নবজাতকটি ছিল ছেলে। শুক্রবার (৫ মে) রাত সাড়ে ১১টায় নবজাতককে নিয়ে তার স্বজনরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আসেন।

জেলার রানীনগর উপজেলার খট্টেশ্বর ইউনিয়নে দাউদপুর গ্রামে কৃষক মোকলেছুর রহমানে ছেলে ডা. ফরিদ এইচ খান। রানীনগর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ২০১৭ সালে এমবিবিএস পাস করেন। পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে ২০২২ সালে যোগদান করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজের ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পোরশা, নওগাঁতে নাইট ডিউটি করতে আসেন মেডিকেল অফিসার ডা. ফরিদ। ডিউটিতে আসার পর থেকেই একের পর এক রোগী আসছিলেন। কেউ মারামারির রোগী, কেউ সড়ক দুর্ঘটনার, কেউ বিষ খেয়েছে, কারো বা ডায়রিয়া। রোগী দেখা শেষ করে একটু বিশ্রামের জন্য রুমে প্রবেশ করলেন আর অমনি ফোন আসলো, স্যার তাড়াতাড়ি আসেন। একটা মৃত বাচ্চা এসেছে। দেখে যান।’

‘ডা. ফরিদ তড়িঘড়ি করে গিয়ে দেখেন আসলেই বাচ্চার জীবনের চিহ্ন নেই। শেষ চেষ্টা হিসেবে মাহমুদকে (এসএসএমও) আম্বু ব্যাগ দিয়ে বাতাস দেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে তিনি শিশুর বুকে চাপ দিয়ে হৃদপিণ্ডকে উদ্দীপনা দেওয়া শুরু করেন। সঙ্গে নার্স ও মিডওয়াইফ তাদের সবটুকু সাপোর্ট দিয়ে সাহায্য করতে লাগলেন।’

‘সিপিআর দিতে দিতে যখন দেখা যাচ্ছে কিছুই হচ্ছে না তখন অনেকেই বলতে লাগলো শুধু শুধু চেষ্টা করে লাভ নেই। তবুও তাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না। এভাবে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট সিপিআর দেওয়ার পরে বাচ্চা জোরে একটা শ্বাস নিলো এবং হার্ট বিটসহ সব আল্লাহর রহমতে ফিরে এলো। যখন রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্বসহ (স্যাচুরেশন) সব কিছু মেইনটেইন হচ্ছিল তখন বাকি চিকিৎসা দিয়ে বাচ্চাকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

সচেতনতার উদ্যোগে ওই পোস্টে আরও বলা হয়, গ্রামে গঞ্জে বাসায় বাসায় এখনো অহরহ নরমাল ডেলিভারির নামে এমনভাবে বাচ্চা মারা যাচ্ছে তা খেয়াল রাখতে হবে। বাসায় যদি ডেলিভারিতে বেশি সময় লাগে তাহলে বাসাতে আর চেষ্টা না করাই ভালো। এখন সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সপার্ট মিডওয়াইফ রয়েছেন। যারা নরমাল ডেলিভারি করাতে এক্সপার্ট। বাচ্চাটি রাজশাহী মেডিকেলে এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ আছে। সবাই বাচ্চাটির জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করবেন।

ওই রাতের অভিজ্ঞতার বিষয়ে ডা. ফরিদ এইচ খান বলেন, রোগী দেখা শেষ করে একটু বিশ্রামের জন্য রুমে ঢুকতেই ফোন আসলো। স্যার তাড়াতাড়ি আসেন। একটা মরা বাচ্চা এসেছে দেখে যান। মৃতপ্রায় নবজাতকের নিয়ে তার স্বজনরা হাসপাতালে আসে। তখনো নাভী কাটা হয়নি এবং ফুলসহ আরেকজন ধরে রেখেছিল।

এ অবস্থা দেখে প্রথমে আম্বু ব্যাগ দিয়ে বাতাস করা হয়। এরপর বুকে চাপ দিয়ে হৃদপিণ্ডকে উদ্দীপনা দেওয়া শুরু করা হয়। আস্তে আস্তে শরীর লাল হচ্ছিল এবং এক পর্যায়ে প্রাণ ফিরে আসে। এইভাবে প্রায় ৩০-৪০ মিনিট সিপিআর দেওয়ার পরে বাচ্চা জোরে একটা শ্বাস নিলো। এইভাবে হার্ট বিটসহ সব আল্লাহর রহমতে ফিরে পেলাম। এরপরে যখন স্যাচুরেশনসহ সব কিছু মেইনটেইন হচ্ছিল তখন আমরা বাকি চিকিৎসা দিয়ে বাচ্চাকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে রাজশাহী পাঠিয়ে দিলাম।

পূর্ব অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সালেও ২-১ বার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সফল হওয়া যায়নি। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করেছিলাম এবং সফল হয়েছিল। শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনাটা আমার জীবনের অনেক বড় একটা স্বার্থকতা বলে মনে করছি।

এএএল/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।