মা ও শিশুসেবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা, ভোগান্তিতে সেবাপ্রত্যাশীরা
বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) পরিচালিত মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। সমাজের নিম্নআয়ের মানুষেরা এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবা পেতেন। হঠাৎ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পড়েছেন চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরবান হেলথ কেয়ার প্রকল্পের আওতায় বিসিসির মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতো বেসরকারি সংস্থা সীমান্তিক। মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য কাউনিয়া বাঁশেরহাট এলাকায় রয়েছে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল। রূপাতলী হাউজিং, আলেকান্দা জুমির খান সড়ক, কাউনিয়া প্রধান সড়কের পানির ট্যাংকের পাশে ও আমানতগঞ্জ পলাশপুরের বউবাজার এলাকায় রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। প্রতিটি কেন্দ্রে এমবিবিএস চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিতেন। হাসপাতালে প্রসূতি নারীরা প্রসব, সিজারিয়ান অপারেশনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পেতেন। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১ এপ্রিল নগরীর কাউনিয়ায় ২০ শয্যার নগর হাসপাতালসহ পাঁচটি সেবাকেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্নআয়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীরা।
সম্প্রতি নগরীর কাউনিয়া বাঁশেরহাট সংলগ্ন ২০ শয্যার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। এসময় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় সেবা নিতে আসা অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। মতাসার এলাকা থেকে আলট্রাসনোগ্রাম করার জন্য আসা অন্তঃসত্ত্বা নারী সেফালী বেগম বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ বলে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য যেতে বললেন দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড।
সেখানে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডের কাছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১ এপ্রিল থেকে এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিসহ অপর চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কিছুদিন পর আবার চালু হবে বলে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বরিশাল সিটি করপোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে ১২ চিকিৎসকসহ ১০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। তারা সবাই এখন তাদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. খন্দকার মঞ্জুরুল ইমাম শুভ বলেন, ‘নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পরিচালনায় সীমান্তিকের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এরপর ওই সংস্থাটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেনি। যে কারণে সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, তারা বেসরকারি সংস্থা সীমান্তিকের নিয়োগে চাকরি করেন। ১ এপ্রিল সকাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের জানিয়েছেন, বিসিসির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তারা মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। মেয়াদ বাড়ানো হলে আবার স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হবে।
এ বিষয়ে বিসিসির প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল ইসলাম লিটু বলেন, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করায় সেখানে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাচারিতা, অবৈধ গর্ভপাত সেবার নামে দুর্ভোগের অভিযোগ ছিল। তাই বিসিসি তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ায়নি। সিটি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বিসিসি নিজেরাই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করবে।
সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল মেয়র বলেন, ‘আমরা নগরবাসীর জন্য ভালো কিছুর চেষ্টায় আছি। ভালো কিছুর জন্য একটু সময় তো লাগবেই।’
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী সীমান্তিকের প্রকল্প পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, বিসিসির সঙ্গে তাদের পাঁচ বছরের চুক্তি ছিল। যার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আরও ১৫ মাসের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে পুনরায় প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা হবে।
সেবার নামে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন একটি অভিযোগ। একটি সরকারি প্রকল্পের কাজে এখানে অবৈধ কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। যারা এগুলো বোঝেন না শুধু তারা এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন।’
এসআর/জিকেএস