জয়পুরহাটে বাড়ছে বাহারি রঙের তরমুজ চাষ, লাভ চারগুণ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, ০৩ মে ২০২৩

কৃষির ওপর নির্ভরশীল দেশের উত্তরের জেলা জয়পুরহাট। জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় জনপ্রিয় হচ্ছে মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ। পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন রঙের তরমুজ চাষে সফল কৃষকরা।

বছরে তিনবার বিভিন্ন রঙের তরমুজ চাষ করে চারগুণ লাভের মুখ দেখেছেন তারা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও রসালো হওয়ায় চাহিদাও বেশি। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ পদ্ধতিতে শীতকালের তিন মাস বাদে ৯ মাস তরমুজ উৎপাদন সম্ভব। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য ফসল বাদ দিয়ে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিঘাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকা। এতে বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হচ্ছে।

জয়পুরহাটে এ বারোমাসি তরমুজ চাষ বেশিদিনের নয়। পাঁচবিবি উপজেলার ভাড়াহুত গ্রামের কৃষক আবু মুসা ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম মাত্র আড়াই শতক জমিতে মাচায় ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা তরমুজ চাষ শুরু করেন। যা এখন বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিন শত বিঘা।

দিন দিন চাষির সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে পাঁচবিবি, আক্কেলপুর ও কালাই উপজেলার ৬৫ গ্রামের তিন শতাধিক কৃষক চায়না, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ান দেশের ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা, তৃপ্তি, ডায়না, সুগার কুইনসহ বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা যায়, জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে এবার বারোমাসি তরমুজ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদরে ৯ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ২২ হেক্টর, আক্কেলপুর উপজেলায় ২ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৫ হেক্টর ও কালাই উপজেলায় ৭ হেক্টর।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশের তৈরি মাচার ওপর গাছে গাছে ঝুলছে গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ। বীজতলা বা ক্ষেত থেকে সার ধুয়ে যায়। মালচিং পেপার দিয়ে মোড়ানো থাকায় এখানে সেই আশঙ্কাও নেই। সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে নতুন এ পদ্ধতিতে গাছগুলো দেড়গুণ তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। গাছ থেকে যেন ফলগুলো ছিঁড়ে না পড়ে এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে নেটের ব্যাগ।

জয়পুরহাটে বাড়ছে বাহারি রঙের তরমুজ চাষ, লাভ চারগুণ

চাষিরা জানান, গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজের ওজন হয় এক থেকে দেড় কেজির মধ্যে। আর ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ দেড় থেকে তিন কেজি হয়। তাই মাচায় ঝুলে থাকা ফলগুলো নেটের ব্যাগেই বেঁধে রাখতে হয়।

চারা রোপণের ৫০ দিনের মধ্যেই ফলন আসে এবং ফল পরিপক্ব হয়ে যায়। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি গোল্ডেন ক্রাউন, ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তরমুজ চাষি মুসা মন্ডল সাইদুর বলেন, ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা, তৃপ্তি, ডায়না, সুগার কুইন তরমুজের চাহিদা অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই কিনে নিয়ে যায়। ফলে বাজারজাত করা নিয়ে বাড়তি কষ্ট করতে হয় না। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে ব্যাপক আকারে এ তরমুজ চাষের চিন্তা আছে।

জয়পুরহাটে বাড়ছে বাহারি রঙের তরমুজ চাষ, লাভ চারগুণ

ভূতগাড়ী গ্রামের তরমুজ চাষি জয়নাল হক বলেন, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে কৃষক আবু মুসা আমাদের এলাকায় প্রথম তরমুজ চাষ শুরু করেন। তাঁর সাফল্য দেখে দুবছর পর থেকে দেড় বিঘা জমি দিয়ে আমিও তরমুজ শুরু করি। লাভজনক হওয়ায় পরের বছর থেকে দুই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করছি। বাজারে বিক্রির জন্য যেতে হয় না, রাস্তার পাশ থেকে খুচরা বিক্রি হয় ও জমি থেকেই পাইকাররা এসে নিয়ে যায়। বিঘাপ্রতি ৬০ হাজার টাকা খরচ হয় আর বিক্রি হয় ২ লাখ টাকার মতো।

রাস্তার পাশ থেকে জয়পুরহাট পৌরশহর থেকে তরমুজ কিনতে আসা জয় মন্ডলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, অসময় তরমুজ খেতে ভালো লাগে। তাই দুবছর ধরে তরমুজ কিনতে এ খানেই আসি। পরিবারের সবাই মধুমালা তরমুজ টা খেতে পছন্দ করে। তাই ২০ কেজি কিনে নিলাম।

জয়পুরহাটে বাড়ছে বাহারি রঙের তরমুজ চাষ, লাভ চারগুণ

ঢাকা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বারোমাসি তরমুজের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। গত তিন বছর ধরে আমি এখান থেকে ঢাকায় তরমুজ নিয়ে যাই। এখান থেকে পাইকারি ১৫০০-১৭০০ টাকা মণ হিসাবে কিনে ঢাকায় সাড়ে ৩ হাজার-৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করি। এখানকার তরমুজ অনেক রসালো ও মিষ্টি হওয়াও চাহিদাও ব্যাপক।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. মুজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ অনেক লাভজনক ফসল। প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতিতে কমপক্ষে ৫০ ভাগ সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কম লাগে। এ পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ পরিবেশবান্ধব। গত বছর জেলায় ৩০০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এবার প্রায় সাড়ে ৩০০ বিঘার ওপর চাষ হয়েছে। এ চাষ সম্প্রসারণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক তদারকিও করা হচ্ছে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।