মে দিবসের ইতিহাস বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা
মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বজুড়ে পালন হলেও সাভারের শ্রমজীবী বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তার মূল ইতিহাস অজানা। শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় অনেকের কাছে দিনটি যেন মেলা।
রোববার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে নির্মাণশ্রমিক জয়নাল আবেদীনের কাছে মে দিবসের বিষয়ে জানতে চাইলে তার সরল উত্তর—‘এই দিনে কাম-কর্ম বন্ধ। শুধু কাম বন্ধ করে বসে থাকা। এইডা একটা গরিবের মেলা।’
শ্রমিক হিসেবে নিজের অধিকার কতটুকু পান, প্রশ্ন করতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই (বুঝতে শেখার পর থেকে) কামলা (শ্রম) দেই আর টেহা (টাকা) পাই। মালিক ভালা (ভালো) হইলে কোনো সময় মজুরি পাই ভালা। কপালে মালিক খারাপ পড়লে মজুরি পাই কম। আমাগো অধিকার কে রক্ষা করবো, আল্লাহ ছাড়া? দুগা (দুমুঠো) খাওনের লাইগাই যুদ্ধ করতে হয়। বাকিসব অধিকার-টধিকার সামনে আহে না।’
পাশেই তপ্ত রোদের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গাছের ছায়ার বসে কী যেন ভাবছিলেন আরেক শ্রমিক আয়েশা খাতুন। তার পাশে বসতেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন, ‘শরীরটা ভালো নেই তবু কাজে আসতে হয়েছে। মালিক বলেছে, কাজ বন্ধ করলে সাপ্তাহিক হাজিরা কেটে দেওয়া হবে। তাই পেটের দায়ে চলে আসা।’
মে দিবসের কথা বলতেই আয়েশা খাতুন বলেন, ‘যেদিন ভালো-মন্দ খাবার জুটে সেটাই আমার কাছে ভালো দিবস। বাকি দিন থাকে দুঃখের দিবস।’
পোশাকশ্রমিক মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখনো শতভাগ চাকরির নিশ্চয়তা নেই। শ্রমিক নির্যাতনও বন্ধ হয়নি। কোথাও কোথাও শ্রমঘণ্টা মানা হচ্ছে না। শ্রমিক সংগঠনগুলোরও জোরালো কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, আন্দোলনের প্রায় দেড়শ বছর পরও শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। তারা কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা ছাড়াও মালিকদের শোষণ থেকে এখনো মুক্ত হতে পারছেন না। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের বিধান থাকলেও তাদের বাড়তি কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই বেশি সময় কাজ করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে এ দেশের স্বাধীনতার অঙ্গীকার শোষণমুক্ত সমাজ কখনো গড়ে উঠবে না।
এসআর/এএসএম