উপজেলা যুবলীগ
সম্পাদক পদ নিয়ে ৯ বছর সরকারি চাকরি, এবার সভাপতি প্রার্থী
সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন রাসেল খান। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকাকালে ২০১২ সালে তিনি উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন। এর দুই বছর পর তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিধিমালা অমান্য করে সরকারি চাকরির পাশাপাশি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। শুধু তাই নয়, ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থীও হয়েছেন রাসেল খান।
এদিকে সরকারি বিধিমালা অমান্য করে যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় ১৮ এপ্রিল আদালতে সাইদুজ্জামান নামে এক যুবলীগকর্মী মামলা করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিবাদী রাসেল খান সরকারি চাকরিজীবী হয়ে রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী না হওয়ার নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী জাকারিয়া আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আদালত খোলার পর বিস্তারিত বলা যাবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ অংশে বলা আছে, সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২০১২ সাল থেকে চাকরিরত আছেন। তৎকালীন সময়ে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থেকে সরকারি চাকরিতে তিনি যোগদান করেন।
দুবছর পর ২০১৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে রাসেল খান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর থেকে সরকারি চাকরির পাশাপাশি ৯ বছর ধরে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দখল করে আছেন। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। ২৮ এপ্রিল উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে জেলা যুবলীগ। সেই সম্মেলনে প্রকাশ্যে পোস্টার ব্যানার করে নিজেকে সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করেছেন রাসেল খান।
বিজয়নগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রাসেল খানের মোবাইলে নম্বরে কল দিলে তিনি মামলার বিষয়ে শোনেননি বলে জানিয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে আছেন কি-না জানতে চাইলে হলে নেটওয়ার্ক সমস্যা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, রাসেল খান যুবলীগ করে। সরকারি চাকরি করে যুবলীগ করা যাবে না, আমাদের গঠনতন্ত্রে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। সরকারের নিয়মের বিষয়টি সরকার দেখবে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে জানান, সরকারি পদে থেকে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। আমাদের যে সরকারি চাকরি বিধিমালা আছে তাতে স্পষ্ট আছে আমরা কোনো রাজনীতি করতে পারি না। কিন্তু তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক রাসেলের বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসজে/জেআইএম