গ্যাস সংকটে ব্যাহত বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের উৎপাদন
গ্যাস সংকটে ব্যাহত হচ্ছে ৬২ বছরের পুরোনো কুমিল্লার বিজয়পুরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প উৎপাদন। এ কারণে বিদেশে রপ্তানিও বন্ধ আছে। একসময় ৪০০ মানুষের কর্মসংস্থান ছিল বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড। বর্তমানে তা কমে ৬০ জনে নেমেছে।
১৯৬১ সালে প্রগতি সংঘের নামে ১৫ জন নিয়ে শুরু হয় মৃৎশিল্পের কর্যক্রম। শুরুতে প্রতিজন এক টাকায় একটি শেয়ার এবং ৫০ পয়সা আমানত রেখে শুরু হয় তাদের কার্যক্রম। পরবর্তী সময়ে সমবায় আন্দোলনের পথিকৃত ড. আখতার হামিদ খান উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি নামকরণ করা হয়। ২২ টাকা ৫০ পয়সা মূলধন নিয়ে শুরু হয় তাদের পথচলা।
১৯৭১ সালে রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতিটি ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭৫ হাজার টাকা প্রণোদনা দেন। এরপর পুনরায় ঘুরে দাঁড়ায় এ সমবায় সমিতি। বর্তমানে সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৫০ জন। সম্পদ রয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকার।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিণ বিজয়পুর, তেগুরিয়াপাড়া, গাংকুল, বারোপাড়া, দুর্গাপুর ও নোয়াপাড়া গ্রামের আট শতাধিক পাল ও কুমোর সম্প্রদায়ের মানুষ মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করতেন শত শত বছর ধরে। বর্তমানে কাজ করছে শতাধিক পরিবার। বিজয়পুরের মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী।
সরেজমিন দেখা যায়, মনীষী ও পশু-পাখির প্রতিকৃতি তৈরি করছেন কুমোররা। কেউ ছাঁচ দিচ্ছেন এসব শিল্পকর্মে। কেউবা আলপনা আঁকছেন। আলাদা আলাদা কক্ষে পোড়ানো ও কাঁচামাটির পণ্য রাখা হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে নারীরাও এ কাজ করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে কুমোরদের এ কর্মযজ্ঞ।
নারীশ্রমিক পার্বতী রানী পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এখানে কাজ করছি। বিনিমেয় আট হাজার টাকা পাই। যা দিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালোই আছি।’
ইকবাল মোল্লা নামের এক ক্রেতা বলেন, বিজয়পুর মৃৎশিল্পের খ্যাতি রয়েছে। দামের দিক থেকেও অনেক সাশ্রয়ী। তাই পণ্য কেনার জন্য সরাসরি ঢাকা থেকে এখানে এলাম। তাদেন নান্দনিক পণ্য আমাকে আকৃষ্ট করেছে।’
বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি তাপস কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৯১ সালে সরকারি খরচে বিজয়পুর রুদ্রপাল শিল্প সমবায় সমিতি এককভাবে গ্যাস সংযোগ পায়। বর্তমানে সেই সংযোগে আবাসিক ও অবৈধ সংযোগ সংযুক্ত হওয়ায় ২০১৫ সাল থেকে হঠাৎ গ্যাস সরবরাহে চাপ কমে যায়। পর্যায়ক্রমে ২০১৭ সালের দিকে গ্যাসের সরবরাহ শূন্যতে নেমে আসে। এরপর বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বহুবার জানানো হলেও তারা কোনো সাড়া দেননি। এতে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণত মাটির পণ্য টেকসই ও নিখুঁত করতে কমপক্ষে ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। গ্যাসের চাপ না থাকায় বর্তমানে লাকড়ি দিয়ে মাটি পোড়ানোর কাজ করতে হচ্ছে। যেখানে ৪০০ ডিগ্রি তাপমাত্রাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কাজের গুণগতমান থাকছে না। অনেক পণ্যের গায়ে দাগ লেগে যাচ্ছে। প্রতি শিফটে বহু মাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের দিন দিন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কেননা আমরাও চাই মৃৎশিল্প পণ্যে কোয়ালিটি বাড়ুক।
এসআর/জেআইএম