শত বছর ধরে স্বাদে অটুট সলপের ঘোল

এম এ মালেক
এম এ মালেক এম এ মালেক , জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০২৩

সিরাজগঞ্জের স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা দুধ নির্দিষ্ট সময় জ্বাল দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় সুস্বাদু এক ধরনের পানীয়। জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ রেল স্টেশন এলাকায় এই পানীয় খ্যাতি পেয়েছে ‘সলপের ঘোল’ হিসেবে।

বাঙালিদের কাছে ঘোল ও মাঠার এখনো ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সিরাজগঞ্জ ছাড়াও সলপের ঘোলের স্বাদ নিচ্ছেন দেশের নানা জায়গার মানুষ। এই পানীয় বিক্রি করে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে সলপ রেল স্টেশনে গেলে দেখা যায়, ইফতারে ঘোল রাখতে ক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন। এখানে শত বছর আগে গড়ে উঠেছে এ ঐতিহ্য।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ব্যবসার পেছনের ইতিহাস শতবর্ষের। শত বছর আগে সলপ এলাকার সাদেক আলী নামে এক ব্যক্তি কাজের খোঁজে রাজশাহী যান। সেখানে এক ঘোষের কাছ থেকে ঘোল ও মাঠা বানানো শিখে এসে ১৯২২ সালে সলপ রেল স্টেশন এলাকায় এ ব্যবসা শুরু করেন।

সাদেক আলী প্রথম দিকে বাড়িতে ঘোল ও মাঠা বানিয়ে স্টেশন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে উল্লাপাড়া থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা এসে তার তৈরি এই পানীয়ের স্বাদ নিতে শুরু করেন। জমে ওঠে তার ব্যবসা। একসময় স্টেশনের কাছে একটি দোকান গড়ে তোলেন তিনি। সাদেক আলীর মৃত্যুর পর তার ছেলেরা এই ব্যবসার হাল ধরেন। তাদের হাতে গড়ে ওঠে আরও ৪টি দোকান। তাদের তৈরি ঘোলের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। দেখাদেখি আরও অনেকে এই ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন।

সাদেক আলীর নাতি আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে বলেন, ঘোল ও মাঠার ব্যবসা কেবল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, এটি এখন এই অঞ্চলের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

শত বছর ধরে স্বাদে অটুট সলপের ঘোল

তিনি বলেন, সলপ স্টেশনে একসময় বেশি ট্রেন দাঁড়াতো না। অনেকটাই ফাঁকা থাকতো স্টেশন এলাকা। কিন্তু শুধু ঘোলের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানকার চিত্রই পাল্টে গেছে।

স্থানীয় শিক্ষক আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, এখন এই এলাকার শতাধিক মানুষ ঘোল ও মাঠার ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কেউ কারখানায় কাজ করছেন, কেউবা দুধের যোগান দিচ্ছেন। আবার কেউ খড়ির ব্যবসা করছেন। সবই হচ্ছে ঘোলের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে।

শত বছর ধরে স্বাদে অটুট সলপের ঘোল

সলপের ঘোল ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে জানান, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার মণ দুধের ঘোল ও মাঠা তৈরি হয় এ এলাকায়। তবে রোজার মধ্যে এ উৎপাদন বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

সলপ স্টেশন এলাকার কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, ঘোল-মাঠা তৈরির পাশাপাশি ঘোলের সঙ্গে মুড়কি মিশিয়ে এক ধরনের মজার খাবারও তৈরি করা হয়। যার স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেকেই।

শত বছর ধরে স্বাদে অটুট সলপের ঘোল

তাড়াশ উপজেলার মৎস্যজীবী মাসুদ সেখ সলপের ঘোল কিনতে এসেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখানকার ঘোল ও মাঠার সুনাম অনেক শুনেছি। তাই আজ ইফতারে পরিবারের সবাই এই ঘোলের স্বাদ নেবো।

ঘোল ও মাঠা ব্যবসায়ী আব্দুল মালেকের দাবি, গুণগত মানের প্রশ্নে তারা কখনো আপস করেন না। তাই শতবর্ষেও সলপের ঘোলের স্বাদ অটুট আছে। আর যেহেতু এটা এখানকার একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে তাই এই সুনাম ধরে রাখার ব্যাপারেও তারা সচেষ্ট থাকেন।

বছরের প্রত্যেক বৈশাখে এখানে ঘোল উৎসব হয় বলেও জানান এ ব্যবসায়ী।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।