বগুড়ার ‘সাদা সোনা’ যাচ্ছে বিদেশে
বগুড়ার চিকন সাদা সেমাইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে এ সেমাই। প্রচুর চাহিদা এবং লাভজনক হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এর নাম দিয়েছেন ‘সাদা সোনা’। ঈদ সামনে এখন কর্মমুখর বগুড়ার সাদা সেমাই পল্লি। এ সেমাই সরবরাহ করতে কারিগররা দিনরাত কাজ করে চলেছেন। তাদের যেন দম ফেলার ফুসরত নেই।
বগুড়ার রাজা বাজার ও ফতেহ আলী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই ধরনের সাদা সেমাইয়ের মধ্যে একটি সুতার মতো চিকন এবং অপরটি তুলনামূলক মোটা। খোলা বাজারে দুই ধরনের সেমাই বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে। বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে ময়দা দিয়ে তৈরি সাদা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। আবার সাদা সেমাই (ভাজা) প্যাকেট আকারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে।
আরও পড়ুন: ঈদে ৩০০ কোটি টাকার লাচ্ছা বিক্রির আশা
জেলায় কমপক্ষে তিন শতাধিক কারখানায় সাদা চিকন সেমাই তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে শহরের মাদলা, বেজোড়া, ঢাকন্তা, শ্যাওলাকান্দি, বনানী, সুলতানগঞ্জপাড়া, চেলোপাড়া, নারুলী, নুরানী মোড়ে বৃন্দাবনপাড়ায়। কেউ কারখানা খুলে, আবার কেউ নিজ নিজ বাড়িতে সেমাই তৈরি ও প্যাকেটজাত করেন। তবে তাদের বেশিরভাগই মৌসুমি ব্যবসায়ী। পুরো রমজান মাসে এবং ঈদুল আজহার সময় সেমাই তৈরি ও বিক্রি শেষে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেন। আবার অনেকেই সারা বছর কারখানায় সেমাই তৈরি ও বিক্রি করে থাকেন। এদের মধ্যে বগুড়া শহরের অর্ধশতাধিক বেকারি ও হোটেল- রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সারা বছর সাদা সেমাই তেরি করে।
বগুড়া শহরের রাজা বাজার এলাকার সাদা সেমাই ব্যবসায়ী আমিনুল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, সময়মতো কারিগর পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলে বেশি দামে শ্রমিক রাখতে হয়। ময়দার দাম বেড়েছে। রোদ না থাকলে সাদা সেমাই শুকানো যায় না। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে লোডশেডিং। এসব কারণেই সাদা সেমাইয়ের দাম কিছু বেড়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরাঞ্চলে নবদিগন্তের সূচনা
‘বগুড়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ, নওগাঁ, নাটোর, ঢাকা, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সাদা সেমাই সরবরাহ হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো কুরিয়ারের মাধ্যমে সেমাই পৌঁছানো হয়। দামের বিষয়টি শুকানো এবং সেমাইয়ের গুণাগুণের ওপর নির্ভর করে। তবে ঈদ এবং সাদা সেমাইয়ের নামডাক ছড়িয়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ,’ যোগ করেন আমিনুল মিয়া।
বগুড়া শহরের ঢাকন্তা গ্রামের সেমাই শ্রমিক আলী ইমাম জানান, ময়দা পেস্ট করে মেশিনের মাধ্যমে সেমাই তৈরি করা হয়। মেশিন থেকে বের হওয়া সাদা সেমাই প্রথমে ভেজা থাকে। ভেজা সেমাইকে হাতের সাহায্যে একটি চিকন কাঠির সঙ্গে ঢেউ তোলার মতো করে দুই ভাজ দিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর এটি বাজারজাত করা হয়। রান্নার সময় একটু ভেজে নিতে হয়।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার বগুড়া!
ব্যবসায়ী আজমল হোসেন বলেন, বগুড়ার চিকন সাদা ও লাচ্ছা সেমাই উত্তরাঞ্চলের সব জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ঈদের আগে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শ্রমিকদের দিনরাত পরিশ্রম করিয়ে অর্ডার পূর্ণ করা হয়।
বগুড়ার বেজোড়া এলাকার সেমাই কারখানার মালিক মামুন মিয়া বলেন, ঈদের আগে সাদা সেমাইয়ের প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন সাদা সেমাই নিতে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পার্সেল করে পাঠাতে হয়। তিনি জানান, সিলেট, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামে সেমাই পাঠানো শুরু হয়েছে রোজার শুরু থেকে।
আরও পড়ুন: কৃষি যন্ত্রাংশে বগুড়ায় নীরব বিপ্লব
বগুড়ার চিকন সেমাই নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত—সবার ঘরে সমান জনপ্রিয়। দেশে ও বিদেশে ঈদের ‘গিফটের’ খাতায় নাম লিখেছে এ ‘সাদা সোনা’। আব্দুল হামিদ নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, বগুড়ার চিকন সেমাই দুই বছর ধরে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতে পাঠাচ্ছি। সেখানে এ সেমাই একে অপরকে উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন। বিশেষ প্যাকেটে করে সেমাই পাঠানো হয়।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ জাগো নিউজকে বলেন, বগুড়ায় সেমাইয়ের ঐতিহ্য অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। তবে এখন এর ব্যাপ্তি ঘটেছে বিদেশেও। আগে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এটা সত্য কথা। তবে এখন বগুড়া চেম্বারের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার পরিকল্পনা নিয়েছি। কেউ ব্যাংকের সহযোগিতা চাইলেও আমরা সব রকমের সাপোর্ট দেবো। আমরা চাই তারা ব্যবসা আরও বড় করুক। সফলতার গল্প তৈরি করুক।
এসআর/জিকেএস