সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৭:৪৩ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০২৩

টানা ১১ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। বুধবারও (১২ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। টানা তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জনজীবন।

অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। জরুরি কাজ না থাকলে মানুষজন তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। জেলা সদরের হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বেড়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগীর সংখ্যা।

দিনমজুর মো. শামসুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এত তাপমাত্রা সহ্য করা কঠিন। জমিতে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলাম না। এখন ছায়ায় বসে আছি। আজ কাজ শেষ করতে দেরি হবে।’

jagonews24

রাস্তার পাশে বসে বেল ও কলা বিক্রি করছিলেন মুনছুর আলী। তিনি বলেন, ‘কোনো বিক্রি নেই। শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছি। এভাবে চললে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে।’

তরমুজ ও ডাব বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, ‘এত গরম তারপরও দিনের বেলায় তেমন বেচাকেনা নেই। ইফতারের আগমুহূর্তে বিক্রি বাড়বে আশা করি। কিন্তু অসহ্য এ গরমে দোকানে বসে থাকাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

বেসরকারি চাকরিজীবী রত্না মালিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ তাপমাত্রায়ও অফিসে এসেছি। তবে ফিল্ডে যেতে পারছি না। সৃষ্টিকর্তা দ্রুত আবহাওয়া স্বাভাবিক করুক। সেই প্রার্থনা করি।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত একটানা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১১ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ শেষে এতথ্য জানায় আবহাওয়া অফিস।

jagonews24

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ‘আজ চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমের ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে আপাতত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তাপমাত্রা আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় মার্চ ও এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মার্চে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে তাপমাত্রা আরও বেড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু কনসালট্যান্ট ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন বলেন, গরমের কারণে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। শিশুরা ডায়রিয়া ও টাইফয়েডে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। আর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ৫৫ জন। শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় গরমের ভেতর গাদাগাদি করে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

গরমে শিশুদের প্রতি যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিশুরা অতিরিক্ত গরম সহ্য করতে না পারায় সহজে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের টাটকা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।