বরিশাল সিটি নির্বাচন
মেয়র হতে চাচা-ভাতিজাসহ ৮ জনের দৌড়ঝাঁপ
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পাড়া-মহল্লা, সভা-সমাবেশ, ইফতারির আয়োজনের মাধ্যমে তাদের প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও বিভিন্ন পোস্টার, ভিডিও, ছবি দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দোয়াও চাইছেন।
তবে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবার মুখে এখন চাচা-ভাতিজাকে নিয়ে আলোচনা। কে পাবেন মনোনয়ন এ নিয়েই চলছে সর্বমহলে কানাঘুষা। অর্থাৎ বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং তার আপন চাচা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপন ভাগনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতও নৌকা প্রতীকের দাবি করেছেন। তাই বরিশালবাসী এখন অধীর আগ্রহে আছেন কে আসছেন নৌকার কাণ্ডারি হয়ে।
এদিকে চাচা ভাতিজা ছাড়াও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মো. মঈন তুষার নির্বাচন করবেন বলে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন।
এদিকে বিভিন্ন সভা সমাবেশে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার থেকে অন্য কেউ যোগ্যতাসম্পন্ন হলে অবশ্যই বরিশালের মানুষ তাকেই ভোট দেবেন। আমি যদি বরিশালের মানুষের জন্য কাজ করে থাকি তাহলে অবশ্যই বরিশালের মানুষ সেটি বিবেচনা করে দেখবেন। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার। তা কতটুকু পেরেছি জনগণ বলতে পারবে। গতবারও মানুষের কাছে আমি দোয়া চেয়েছি, এবারও আমি মানুষের কাছে দোয়া চাইব।’
বেশ কয়েক দিন ধরে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশালে নেই। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘মেয়র ঢাকায় অবস্থান করছেন। সঙ্গে তার বাবা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির প্রধান ও সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহও আছেন। তিনিসহ বরিশালে দলীয় নেতারা মনোনয়নের বিষয়টি দেখবেন।’
এদিকে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেন সেই দায়িত্ব শতভাগ পালন করবো। আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সে হিসেবে অবশ্যই মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবো। মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেলে শতভাগ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবো।’
এছাড়া বরিশাল সদর আসনের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ মাহমুদুল হক খান মামুনও মনোনয়ন চেয়ে এরই মধ্যে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছেন। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশও করতে দেখা গেছে তাকে।
এ বিষয়ে মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবো, সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে নগরবাসীও জানেন আমি নির্বাচন করবো। সাড়ে চার বছরে বরিশাল সিটি অনেক পিছিয়ে আছে। তাই নগরবাসীর সেবার জন্য জনগণ আমাকে ভোট দেবেন।
এদিকে ৯ এপ্রিল সকালে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে আধুনিক নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করতে চাই। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো না।
আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী মো. মঈন তুষার বলেন, বিগত পাঁচ বছরেও নগরবাসীর আশা পূরণ করতে পারেনি বর্তমান মেয়র। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। জনগণের স্বার্থেই আমি নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবো। আশা করি দুঃসময়ের পরীক্ষিত একজন ছাত্রনেতা হিসেবে নেত্রী আমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আমি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।
এদিকে আওয়ামী লীগের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাপা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) হয়ে প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন অনেকে। তবে বিএনপি শিবিরে নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো হৈ-চৈ দেখা যায়নি। যদিও সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন এ নির্বাচনে ভিন্ন এক চিন্তা থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বরিশালের মানুষ উন্নয়ন ও পরিবর্তন চায় জানিয়ে রূপন বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। কারণ এ সরকার দিনের ভোট রাতে কারচুপি করতে পারে। তবে আমি চাই এ নির্বাচনে অংশ নিতে।’
বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন জাগো নিউজকে বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না দল। বিগত দিনে উপজেলায় কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কারণ হাসিনা সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
তিনি আরও বলেন, এত নির্যাতনের পরও দলের বাইরে কেউ যায়নি, সেখানে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর বিএনপি এ নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না বলেই এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অপরদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে আগে ভাগেই বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। সেই হিসেবে জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সদস্যসচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসই হচ্ছেন প্রার্থী। যিনি গত নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন।
প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নগরবাসীর সেবার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। আমাকে দল আগাম মনোনয়ন দিয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ বরিশালের মানুষ উন্নয়ন চায়, আর বরিশালের উন্নয়নের জন্য আমি কাজ করতে চাই।
এসবের বাইরে গত সিটি নির্বাচনে আলোচনায় থাকা একমাত্র নারী প্রার্থী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী এবারও প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
তবে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, আমাদের দল ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, আমার একক কোনো সিদ্ধান্ত নেই না। দল যা বলবে তাই। তবে নির্বাচনে জনগণ থাকবে কি না, সেই বিষয়টি বিবেচনায় আমাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সিদ্ধান্ত হবে। আর নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো কিছুই দেখাতে পারেনি এখনো, সেক্ষেত্রে প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্ন আসে না। নির্বাচন এখন নির্বাসনে গেছে।
অপরদিকে বিগত নির্বাচনগুলোর মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীরাও বিভিন্ন সিটি নির্বাচনী মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির- মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বরিশাল জেলা সভাপতি মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়েরসহ তিনজনের মধ্যে যে কেউ বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য কে এম শরীয়াতুল্লাহ।
বরিশাল নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল সিটি করপোরেশনে হালনাগদ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ১৭৭ জন।
এসজে/এএসএম