রেডিমেড কাপড়ে ঝোঁক মানুষের, দর্জিপাড়ায় মন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৩

সময়ের পরিবর্তনে বদলেছে মানুষের রুচি। পোশাকেও এসেছে নতুনত্ব। এখন আধুনিক নকশার মনকাড়া পোশাকের ওপর নজর বেশি। ফরমায়েশি ছেড়ে রেডিমেড পোশাক তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়েছে। সবমিলিয়ে প্রভাব পড়েছে রংপুরের দর্জিপাড়ায়। ঈদ ঘনিয়ে এলেও নেই আগের মতো ব্যস্ততা।

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, বর্তমান সময়ে গার্মেন্টস, ফ্যাশন হাউজ ও বুটিক শিল্পের কাছে দর্জি হাউজগুলো অসহায়। পোশাক তৈরির ঝামেলা এড়াতে সবাই এখন রেডিমেড বা অনলাইনের ওপর ভরসা করছেন। এছাড়া করোনাপরবর্তী সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ পোশাক তৈরি কমিয়ে দিয়েছেন।

নগরীতে থান কাপড় ও সেলাইয়ের মার্কেটে ছোট ও মাঝারি প্রায় পাঁচশ দোকানে কাজ করেন প্রায় আড়াই হাজার কর্মচারী। যারা ঈদের পোশাক তৈরির সময় কিছু কাজ পেলেও বছরের বেশিরভাগ সময় থাকেন বেকার। তবে এবার ঈদে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

আরও পড়ুন: মানুষ খাবে নাকি নতুন কাপড় কিনবে, প্রশ্ন ব্যবসায়ীর

রংপুর মহানগর লেডিস টেইলার্স শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাজিউর রহমান নজরুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে কাপড়ের দাম বেশি। সাধারণ ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। বেশি দামে কাপড় কিনে টেইলার্সে পোশাক বানানো মানুষ কমিয়ে দিয়েছে।’

নজরুল বলেন, ‘ইদানীং গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে দর্জির কাজ হয়। সেখানে ঘরভাড়া কম। কর্মচারীর বেতন-বোনাস লাগে না। ফলে স্বল্প মূল্যে কাজ করা যায়। বাড়তি সময় ও টাকা ব্যয় করে শহরে আসতে চান না অনেকেই। এক শ্রেণির নারীরা রেডিমেড পোশাকের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন। তারা টেইলার্সে আসতে চান না।’

মহানগর জেন্টস টেইলার্স মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপকরণের দাম বেশি। করোনাপরবর্তী সময় থেকে ধীরে ধীরে মন্দাভাব প্রকট হয়ে উঠছে। আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না দর্জি মালিক-শ্রমিকরা।’

আরও পড়ুন: এবারও ভোগাবে উত্তরের ঈদযাত্রা

তিনি বলেন, ‘ঈদ এলে দর্জিপাড়ায় উপচেপড়া ভিড় থাকে। কাজের চাপে হাঁফ ছাড়ার সময় পান না পোশাকের কারিগররা। তবে এবারের ঈদে দর্জিপাড়ায় কোনো ব্যস্ততা নেই। দর্জি ঘরগুলোতে পোশাকের তেমন চাপ নেই।’

স্কুলশিক্ষিকা শামীমা আক্তারি প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, ‘টেইলার্সে একটা জামা বানাতে গেলে ৪০০-৫০০ টাকা মজুরি লাগে। সেখানে ওই টাকাতে বা আর কিছু টাকা হলেই একটা রেডিমেড পোশাক পাওয়া যায়। তাহলে কেন দর্জির কাছে যাবে মানুষ?’

নগরীর হাড়িপট্টি রোডের কাপড় ব্যবসায়ী আবু সাঈদ বলেন, ১৮ রোজা চলে যাচ্ছে কিন্তু ব্যবসা আগের মতো নেই।

কাস্টমার কমে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে টেইলার্স মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাজারে একটি রেডিমেড প্যান্ট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হলেই পাওয়া যায়। সেখানে টেইলার্সে প্যান্ট সেলাইয়ের মজুরিই ৫০০ টাকা। কর্মচারীদের মজুরি, ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ মিলে যে ব্যয় হয় সে অনুযায়ী কাজের পরিমাণ আশানুরূপ নয়। এ পেশা ও পেশা সংশ্লিষ্ট মানুষকে বাঁচাতে প্রণোদনাসহ সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

জিতু কবীর/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।