ব্রহ্মপুত্র পাড়ে দাঁড়িয়ে ১৭০ বছরের পুরোনো মসজিদ

মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৩

ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৪৪৫ হিজরি ও ১০৫৩ খ্রিস্টাব্দে আগমন ঘটেছিল হযরত শাহ মুহাম্মদ সুলতান কমর উদ্দিন রুমির (রহ.)। তিনিই এ অঞ্চলে প্রথম ইসলাম ও দীনের দাওয়াত শুরু করেন। তখন থেকেই ঈমানি চেতনায় নামাজ, ইবাদত, বন্দেগি করতে মুসলিমরা মসজিদ নির্মাণ করেন। কালের বিবর্তনে মুগোল-জমিদার আমলের অনেক মসজিদ বিলীন হয়ে গেলেও, কিছু কিছু মসজিদ এখনো সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

লোকমুখে প্রচার আছে ১৮৫০/১৮৫২ সালে জমিদারের মৌখিক অনুমতিতে মুসলিমরা টিনের ছাপরা দিয়ে ময়মনসিংহে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে মসজিদটি ওয়াকফ অ্যাক্টের অধীনে পাবলিক এস্টেটে পরিণত হয়। এটি এখন বড় মসজিদ নামে পরিচিত।

ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারায় নগরীর থানার ঘাটে অবস্থিত এ মসজিদ। এর প্রাঙ্গণে আছে তিন তলা বিশিষ্ট হাফেজি মাদরাসা। যেখানে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

মসজিদটি প্রায় ১.৯ একর জমির ওপর তিন তলা বিশিষ্ট স্থাপনা। মসজিদে ১২৫ ফুট করে উঁচু দুটি মিনার ও একটি গম্বুজ আছে। চীনা মাটির টুকরা দিয়ে গম্বুজটি নকশা করা। ছাদের রেলিংগুলো দেওয়া হয়েছে মিনার ও গম্বুজের আদলে। এর দৈর্ঘ্য ১০৫ ফুট ও প্রস্থ ৮৫ ফুট। মসজিদের প্রতি তলায় ১৮টি করে কাতার আছে। একসঙ্গে অন্তত ৫ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি ফটক। প্রধান ফটক মসজিদের উত্তরপাশে। প্রধান ফটকের দুপাশে দুটি মিনার। মসজিদ থেকে প্রধান ফটক দিয়ে বের হলেই নগরীর ছোট-বাজার, বড়-বাজার। তার ঠিক বিপরীত দিকে মহারাজা রোডে ২ নম্বর গেট। এ গেট দিয়ে ঢুকতে আছে মসজিদের শৌচাগার। তিন নম্বর গেট মসজিদের দক্ষিণ পাশে।

মসজিদের প্রবেশমুখে আছে মুসল্লিদের ওজু করার দুটি পানির হাউজ। এসব হাউজে ছাড়া আছে রং বেরঙের মাছ। মসজিদের ভেতরে মূল্যবান মোজাইক পাথরের মেঝে, দেওয়ালজুড়ে মনোরম টাইলস, অত্যাধুনিক শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

মসজিদ প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মিসর থেকে আগত প্রখ্যাত কারী ও মাওলানা আবদুল আওয়াল (রহ.) ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪১-১৯৯১ সাল পর্যন্ত টানা ৫৬ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন জামানার কুতুব হজরত মাওলানা ফয়জুর রহমান (রহ.)। ১৯৯১ সালে আল্লামা শায়খ আবদুল হক ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

মসজিদের মোয়াজ্জিন ক্বারি শহিদুল ইসলাম বলেন, মসজিদে একসঙ্গে ৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রতি রমজানে মাসে খতম তারাবির নামাজ পড়ানো হয়। এখন থেকে দুই বছর আগেও মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে রমজানে ইফতারের আয়োজন করা হতো। বিগত দুই বছর যাবত তা বন্ধ আছে। তবে, মসজিদ প্রাঙ্গণে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ইফতারের আয়োজন করেন।

ময়মনসিংহ বড় মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব আল্লামা আব্দুল হক বলেন, মসজিদ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা সঠিক জানা নেই। প্রচলিত আছে ১৮৫০/১৮৫২ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৩২ সালে বড় মসজিদ হাফেজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৫ সালে কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরা হাদিস প্রথম খোলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে গরিব ছাত্ররা বেশি আসে। কোনো কোনো ছাত্র সম্পূর্ণ ফ্রি, কিছু ছাত্র হাফ ফ্রি, আবার কিছু ছাত্র আছে যারা সম্পূর্ণ খরচ নিজেরাই বহন করে। অনেক মানুষ আছে মাদরাসায় দান করে, যাকাত, ফিতরা, কোরবানির চামড়ার টাকা দেন। এগুলো দিয়েই মাদরাসার খরচ চলে।

আব্দুল হক বলেন, মসজিদ হলো মানুষের হেদায়াতের কেন্দ্র, এখান থেকে দিনের কথা চালু হয়, দিন শিক্ষা দেওয়া হয়। মসজিদে যেন আরও মুসল্লি বাড়ে, আমরা সব সময় সেই চেষ্টা করি এবং এ মসজিদ যেন সর্বদিক থেকে দেশের মধ্যে অনন্য একটি।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।