বিজিবি-চোরাকারবারি সংঘর্ষ: নিহত দোকান কর্মচারীর মরদেহ হস্তান্তর
কক্সবাজারের রামুতে জব্দ করা গরু ছিনিয়ে নিতে বিজিবির সঙ্গে চোরাকারবারিদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দেকান কর্মচারীর মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহত আব্দুর জব্বার (৪০) রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কাউয়ারখোপ পশ্চিমপাড়া এলাকার মৃত জাকের আহমদের ছেলে।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মোহাম্মদ আলী জানান, রোববার দুপুর ১২টায় নিহত আব্দুর জব্বারের মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে মরদেহটি বিজিবির সদস্যরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর মরদেহ এলাকায় নিয়ে গিয়ে স্বজনদের দেওয়ার পর আসরের নামাজ শেষে দাফন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ রিপন চৌধুরী বলেন, রামুর ঘটনায় নিহতের মরদেহ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে আনা হয়। এ ঘটনায় আহত বিজিবি হাবিলদার মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, নায়েক মো. লুৎফর রহমান ও মো. আবুল কালাম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ জেড এম সেলিম বলেন, রোববার ভোরে মরদেহটি বিজিবি নিয়ে গেছে। সম্ভবত ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হতে পারে।
সংঘর্ষে আহত বিজিবি সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
বিষয়টি নিয়ে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টান্টু সাহা বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা হাসপাতালে একটি গুলিবিদ্ধ মরদেহ বিজিবি আমাদের দিয়ে সুরতহাল করায়। এরপর আইন মতো মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে পরিবারের কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর মামলা বা অন্য আইনি কার্যক্রম করতে বিজিবিকে রামু থানায় যেতে হবে।
এদিকে, শনিবার গভীর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়ন পরিচালিত হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপে এবং রোববার সকালে বিজিবির সদর দপ্তর থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরীফুল ইসলামের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, শনিবার রাতে সীমান্তের চোরাই গরু জব্দ করে টহল দল পায়ে হেঁটে ফেরার সময় কাউয়ারখোপ এলাকায় সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি, দুষ্কৃতিকারী ও স্থানীয় সহযোগী প্রায় ২০০ হতে ৩০০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা ও ইটপাটকেলসহ বিজিবি টহল দলের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় বিজিবির তিন সদস্য গুরুতর আহত হন। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, এসময় টহল দল সরকারি জানমাল রক্ষার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে গুলি করতে বাধ্য হলে এক চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় একনলা বন্দুক, একটি কিরিচ ও একটি দা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বিজিবি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে বার্তায়।
অপরদিকে, রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হোসাইন বলেন, শনিবার রাতে কাউয়ারখোপে বিজিবির সঙ্গে চোরাকারবারিদের সংঘর্ষের খবর শুনেছি। নানাভাবে হতাহতের খবর শোনা গেলেও এ পর্যন্ত হতাহতের কোনো নিশ্চিত তথ্য তার কাছে নেই।
রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসুল আলম জানান, শনিবার রাত ৯টার দিকে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ছয়টি গরু জব্দ করে বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। জব্দ গরুগুলো নিয়ে আসার সময় পাচারের সঙ্গে জড়িত লোকজন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান। পাচারকারিরা বিজিবির সদস্যদের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়েন। এতে বিজিবির সদস্যরা আহত হন। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা গুলি ছোড়েন। এতে স্থানীয় নির্মাণ সামগ্রী বিক্রির দোকানের এক কর্মচারী ঘটনাস্থলে নিহত হন।
সায়ীদ আলমগীর/ এমআরআর/জিকেএস