খাঁচির পরিবর্তে পলিথিনে সেমাই বাজারজাত, মাহালীদের মাথায় হাত
আগে ঈদ এলেই সেমাইয়ের খাঁচি তৈরিতে জয়পুরহাটের মাহালী পরিবারগুলোর ব্যস্ততা বেড়ে যেত। তবে বর্তমানে ব্যবসায়ীরা পলিথিনের বস্তায় সেমাই প্যাকেটজাত করায় এবার মাহালীদের খাঁচি বিক্রি নেই বললেই চলে।
একদিকে বাঁশের দামবৃদ্ধি, অন্যদিকে সেমাইয়ের খাঁচির চাহিদা ও বেচাকেনা কমে যাওয়ায় মাহালী পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাটের খঞ্জনপুর, দুর্গাদহ ও পাঁচবিবির দমদমাসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় চার শতাধিক মাহালী পরিবারের বসবাস। বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে কোনোরকমে চলে তাদের সংসার।
তবে রমজান এলেই বেড়ে যায় মাহালীদের কাজের পরিধি। এ মাসে তারা যে রোজগার করেন তা দিয়ে চলে যায় দুই থেকে তিন মাস। কিন্তু এবছর তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। খাঁচির পরিবর্তে পলিথিনের বস্তায় সেমাই প্যাকেটজাত করায় কাজ হারিয়েছেন তারা।
খঞ্জনপুর এলাকার বাঁশশিল্পের কারিগর কৈলাশ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে খাঁচি তৈরি করলেও ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে পলিথিনের বস্তায় সেমাই বাজারজাত করায় এবারে আমাদের ব্যবসায় ধস।
একই গ্রামে বাঁশের ডালা তৈরি করছিলেন জয়ন্তী রানী। কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার সংসারে পাঁচজন লোক। প্রতিদিন সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের হাতে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।
প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। তাই পূর্বপুরুষের এ পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে মাহালী পরিবারগুলো।
জানতে চাইলে নতুনহাট এলাকার সেমাই বিক্রেতা দোলন ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধিকারী দোলন কুণ্ডু বলেন, আমার সেমাই বিক্রির বয়স ২০ বছর পার। আগে খাঁচিতে সেমাই আসতো, সেখানে রেখেই বিক্রি করতাম। কিন্তু দুই বছর ধরে খাঁচির পরিবর্তে পলিথিন ব্যাগে সেমাই আসছে। পলিথিনে সেমাই রাখাও সুবিধা, অল্প জায়গায় বেশি রাখা যায়।
মুদি দোকানি সোহেল আহম্মেদ বলেন, সেমাই খাঁচিতে বিক্রি করলে ঈদ ঈদ মনে হয়। এখনকার দিনে পলিথিন ব্যাগে সেমাই আসায় আগের মতো সেই উপলব্ধিটা আর নেই। এছাড়া পলিথিন ব্যাগে সেমাই আসায় বাঁশের কারিগরদের আয়-রোজগারও কমে গেছে। আগের বছরগুলোতে তারা এসময় খুব ব্যস্ত থাকতো কিন্তু এখন আর তাদের সেই ব্যস্ততা নেই।
এ বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের নমুনা সংগ্রহকারী এ কে এম জিয়ায়ুল হক জাগো নিউজকে বলেন, পলিথিন পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দেহেরও ক্ষতি করছে। কিছু পণ্য মোড়কজাত করার জন্য সরকারের অনুমোদন থাকলেও সেমাই রাখার জন্য যে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে তার কোনো অনুমোদন নেই। তারপরও অনেক সেমাই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান খাঁচির পরিবর্তে পলিথিন ব্যবহার করছে।
এছাড়া জয়পুরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, জেলায় চার শতাধিকের বেশি মাহালী পরিবারের বসবাস। তারা চাইলে বিসিকের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।
এমআরআর/এএসএম