হবিগঞ্জে সরকারি নলকূপ স্থাপনে অনিয়ম
হবিগঞ্জে সুপেয় পানির জন্য নলকূপ স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সুবিধাভোগীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কেবল বসতবাড়িতেই নয়, মসজিদ, মাদরাসার নলকূপেও অনিয়ম হয়েছে। কোথাও কম ক্ষমতাসম্পন্ন মোটর বসানো হয়েছে। কোথাও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ঠিকমতো দেওয়া হয়নি। অনেকের টিউবওয়েলের নিচে পাকা করা হয়নি। আবার কারওটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করায় বছর ঘোরার আগেই তা ভেঙে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩০৪টি বাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গভীর ও অগভীর নলকূপ দেয় সরকার। সুপেয় পানির অভাব পূরণ করতে ২০২১-২২ অর্থবছরে এসব নলকূপ স্থাপন করা হয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নলকূপ স্থাপনের কাজটি পায় মেসার্স শামীম ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কাজের শর্ত অনুযায়ী প্রতিটি নলকূপ স্থাপনের পর শুষ্ক মৌসুমেও যেন পানির অভাব না হয় সেজন্য এক ঘোড়া সাবমার্সিবল মোটর স্থাপনের কথা ছিল। পাকা উঁচু ভিটি তৈরি করে তার ওপর পানির ট্যাংক বসানো এবং নিচে পাকা প্ল্যাটফর্ম (কাপড় কাচার স্থান) নির্মাণের কথা ছিল।
সদর উপজেলার পইল ও গোপায়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক ঘোড়া মোটরের স্থলে দিয়েছে পৌনে এক ঘোড়া মোটর। বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্রেকার দেওয়া হয়নি। কোথাও আবার সুইচসহ সরঞ্জামাদিও দেওয়া হয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের। নলকূপের পানির প্ল্যাটফর্ম, ট্যাংক বসানোর জন্য উঁচু চেম্বার নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট। ফলে অনেক স্থানেই চেম্বার ও প্ল্যাটফর্ম ভেঙে পড়ছে। কারও আবার প্ল্যাটফর্ম নির্মাণই হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে উপকারভোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে অবস্থা বেগতিক দেখে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তড়িঘড়ি করে অন্তত অর্ধশত মোটর ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি পরিবর্তন করে দেয়।
পইল মারকাযুত তাক্বওয়া আল ইসলামিয়া মডেল মাদরাসার শিক্ষক মো. আব্দুল বাছির জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ১০ মাস আগে মাদরাসাটিতে একটি গভীর নলকূপ বসানো হয়। কিছুদিন আগে এসে নলকূপের মোটরটি পাল্টে দেওয়া হয়। এটি নিম্নমানের ছিল।
পইল গ্রামের বাসিন্দা মো. এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ঠিকাদার মসজিদ, মাদরাসার টিউবওয়েলেও অনিয়ম করেছে। অনিয়ম করেছে বলেই তো মোটর পাল্টে দিয়েছে। মাদরাসার মোটর পাল্টানোর সময় আমি দেখেছি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুন নূর জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের মসজিদের মোটর প্রথমে ভালো দেয়নি। ফলে কিছুদিন আগে তা আবার পরিবর্তন করে দিয়েছে।
সুবিধাভোগী মামুনুর রশীদের মা সাফিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে যে মোটর দিয়েছিল তা কিছুদিন আগে এসে বদলে দিয়েছে। একজন ইঞ্জিনিয়ার এসে দেখে বলে এটি ভালো নয়। তাই প্রথমটা খুলে নিয়ে আবার অন্য একটি মোটর লাগিয়ে দিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে হবিগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাহমিনা তানভীন জাগো নিউজকে বলেন, দুই-একটি অভিযোগ পেয়েছি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিয়েছি। আরও যদি অভিযোগ পাই তবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এমআরআর/জিকেএস