যুবকের হাত বেঁধে নির্যাতন, ছাড়া পেলেন ২২ ঘণ্টা পর
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার জন্য শেখ আব্দুল্লাহ (২৫) নামের এক যুবকের হাত বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ২২ ঘণ্টার পর ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে নির্যাতনের বিষয়টি কাউকে না জানানোর শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সোমবার (২৭ মার্চ) নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তৎপর হয় পুলিশ।
২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবকের হাতে রশি পেঁচিয়ে গাছে বাঁধা হয়। পাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। খালি গায়ে লুঙি পরিহিত এক ব্যক্তি ওই যুবককে গাছ থেকে ছাড়িয়ে মাটিতে শুইয়ে দেন। এ সময় আরেকজন এসে ওই যুবকের পায়ের ওপর পা রেখে চাপতে থাকেন। কিছু সময় পর খালি গায়ের ব্যক্তি একটি লাঠি দিয়ে ওই যুবকের পায়ের তালুতে মারতে থাকেন। যুবকের পাশাপাশি নারীর কান্নার শব্দও শোনা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার আব্দুল্লাহ বাগেরহাট সদর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার শেখ গফুরের ছেলে। বৃহস্পতিবার দুপুরে অটোরিকশায় বাগেরহাট আসার পথে রামপাল উপজেলার চাকশ্রী এলাকা থেকে শেখ আব্দুল্লাহকে তুলে নিয়ে যান শেখ হাসান আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহর ভাগনে আবু সালেহসহ কয়েকজন।
অটোরিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে ২২ ঘণ্টা নির্যাতনের পরে শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘পূর্ব পরিচিত হওয়ায় শেখ হাসান আলীকে আমি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ধার দেই। কিন্তু তিনি আমাকে টাকা না দিয়ে ঘোরাতে থাকে। পরবর্তীতে টাকা বাবদ শেখ হাসান আলী তার মালিকানাধীন অটোরিকশা আমার কাছে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়ায় আলী অটোরিকশাটি চালাতে থাকে। কিন্তু কয়েকদিন টাকা দেওয়া বন্ধ রাখেন তিনি। তাই জানুয়ারি মাসে আমি অটোরিকশা অন্য জায়গায় বিক্রি করি। পরবর্তীতে এ নিয়ে আর কথা হয়নি।’
আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘হঠাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে চাকশ্রী এলাকা থেকে শেখ হাসান আলী ও চেয়ারম্যানের ভাগনে আবু সালেহসহ কয়েকজন আমাকে ধরে নিয়ে যায়। শেখ হাসান আলীর বাড়িতে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করে। সন্ধ্যায় আমার বন্ধু প্রাইভেটকারচালক আল আমিনকে চাকশ্রী আসার জন্য আমাকে দিয়ে ফোন করায়। আল আমিন এলে তাকেও বেঁধে রাখে হাসান ও আবু সালেহরা। সারারাত আমাকে নির্যাতন করেছে আবুল সালেহ ও হাসানসহ কয়েকজন। শরীরে সিগারেটের ছেঁকা ও আঙুলের মধ্যে খেজুরের কাটা ঢুকিয়েছে। চোখ উঠিয়ে ফেলারও কথা বলেছে। পরে ফাঁকা স্ট্যাম্পে আমার ও মায়ের স্বাক্ষর রেখে এবং ৩ লাখ টাকা দেওয়ার স্বীকারোক্তি নিয়ে ছেড়ে দেয়।’
আব্দুল্লাহর মা খালেদা বেগম বলেন, ‘ছেলেকে যেভাবে নির্যাতন করেছে তা মানুষ করে না। চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি ছেলেকে নির্যাতনের বিচার চাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী শেখ আব্দুল্লাহর বন্ধু প্রাইভেটকারচালক আল আমিন বলেন, ‘বন্ধুর ফোন পেয়ে চাকশ্রী বাজারে গেলে হাসান ও আবু সালেহ আমাকে বেঁধে রাখে। সারারাত আব্দুল্লাহকে নির্যাতন করে। শুক্রবার দুপুরে আমাদের ছেড়ে দেয়।’
নির্যাতনের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার সামনে কোনো নির্যাতন হয়নি। আবু সালেহ আমার ভাগনে নয়।’
বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্ধার জাগো নিউজকে বলেন, যুবক আব্দুল্লাহর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা-জখম আছে। মারাত্মক ইনজুরি আছে কি-না পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ভিডিওটি আমরা দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজে/এএসএম