সুনসান ঘাটে গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৭:১৫ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২৩
গাড়ির অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে ফেরি

পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে কমেছে যাত্রীর আনাগোনা। নেই যানবাহনের ভিড়ও। এখন মৃতপ্রায় ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট। আবার ২৭ কিলোমিটার মহাসড়কের ৫৪ জায়গায় খানাখন্দে ভরা। গাড়ির অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকছে ফেরি।

আগে প্রতিনিয়ত এ ঘাটে যানবাহনের জটলা লেগেই থাকত। খুলনা-চট্টগ্রামসহ ২১টি জেলার যানবাহন চলাচল করতো এ রুট দিয়ে। সবসময় মহাসড়কে মনোহর বাজার, বুড়িরহাট ও ভেদরগঞ্জ বাজারসহ বালারহাট এলাকায় যানজট লেগে থাকতো। ঘাটে এলে দেখা যেত আড়াই কিলোমিটার পথ প্রায় ৬০০-৭০০ গাড়ির লম্বা সারি।

প্রতিটি গাড়ি ফেরির নাগাল পেতে অপেক্ষা করতে হতো দিনের পর দিন। অথচ সেই ঘাট এখন যানবাহনশূন্য। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই পাল্টে গেছে শরীয়তপুরের ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাটের চেনা দৃশ্যপট।

jagonews24

ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগেও এ ঘাট ছিল যানবাহন পারাপারে ব্যস্ততা ও যাত্রীদের ব্যাপক পদচারণা। এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। তখন আটটি ফেরিতেও যানবাহনের চাপ সামলানো যেত না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতো গাড়িগুলো। এখন চলাচল করছে ছয়টি ফেরি। যার মধ্যে একটি রো রো।

আগে এ রুটে ছোট-বড় মিলিয়ে দৈনিক ৬৫০টি গাড়ি পারাপার হতো। এতে ঘাট কর্তৃপক্ষ সরকারি মূল্যে ভাড়া আদায় করতো ১৩-১৪ লাখ টাকা। এখন দৈনিক ৯০-১০০ গাড়ি বিশেষ ক্ষেত্রে ১৩০টি গাড়ি পারাপার হচ্ছে। তাতে ভাড়া আদায় হচ্ছে ৩-৪ লাখ টাকা। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্তই পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার হয়।

সোমবার (২৭ মার্চ) ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সুনসান নীরবতা। নেই যানবাহন ও মানুষ। ঘাট এলাকার মহাসড়ক একেবারে ফাঁকা। ঘাটের কাউন্টারের সামনে নেই কোনো দালালের তৎপরতা। গাড়িচালক বা সহকারীদের হাঁকডাকও নেই।

jagonews24

ফেরি ও নরসিংহপুর লঞ্চ ঘাটের অবস্থাও এক। ১ ও ২ নম্বর ঘাটে একাধিক ফেরি দেখা গেলেও গাড়ি না থাকায় অলস পড়ে আছে। শুধু তাই নয়, লোকের আনাগোনা না থাকায় ব্যবসায়ীদের আয়েও ভাটা পড়েছে। এখানে ছোট-বড় হোটেলের টিকে আছে মাত্র পাঁচটি। বাকিগুলো ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এখন জনশূন্য এ ঘাটে কেউ আর কর্মসংস্থানে আগ্রহী নয়।

এদিকে গাড়ি কমে যাওয়ায় বড় একটা লোকসানে পড়েছে ঘাট ইজারাদার। প্রতিদিন ৬০০-৭০০ গাড়ি পারাপার হতো এ রুটে। এখন তা তিন ভাগের একভাগে নেমেছে এসেছে।

দুপুর ১২টার দিকে ১ নম্বর ঘাটে রো রো (বড়) ড. মো. গোলাম মাওলা ফেরি ভেড়ানো ছিল। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছে ফেরিটি। এর মধ্যে ফেরি ছাড়তে দেরি দেখে ফেরিতে থাকা একটি গাড়ি নেমে যায়।

ফেরি থেকে নেমে যাওয়া গাড়িচালক সোলাইমান হোসেন বলেন, একে তো রাস্তার অবস্থা সাড়ে বাইশ। সব জায়গায় খানাখন্দ আর গর্তে ভরা। ঘাট পর্যন্ত মালামাল নিয়ে আসতে মেরুদণ্ড আমার শেষ হয়ে গেলো। আর ঘাটে এসে দেখি ফেরি গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছে। একের পর এক ঘাট ঘুরছি কোনো ফেরি ছাড়ছে না।

jagonews24

সোলাইমান আরও বলেন, এক সময় এ ঘাটে এসে সিরিয়াল পেতে দালালদের খপ্পরে পড়তে হতো। টাকা বেশি গেলেও আগামীতে আমি পদ্মা সেতু হয়েই পার হবো। এ রাস্তায় আসবো না।

ফেরিঘাট এলাকার মুদিদোকানি মারুফ সরদার বলেন, ‘আগে দৈনিক শতাধিক বাস আসতো। এখন ঘাটে গাড়ি নেই বললেই চলে। দুপুরের পর কিছু মালবাহী গাড়ি আসে। এর আগে কখনো ঘাট এমন ছিল না। এখন আমাদের বেচাকেনা নাই। পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হয়।’

jagonews24

ঘাটে কর্তব্যরত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ইব্রাহীমপুর ফেরিঘাট ব্যবস্থাপক ইকবাল মাহামুদ জাগো নিউজকে বলেন, আগে ২৪ ঘণ্টায় শুধু ইব্রাহীমপুর ঘাটের এ প্রান্ত থেকে ৬০০-৭০০ যানবাহন নদী পার হতো। এখন গড়ে ১০০ গাড়ি পার হয়। আর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চালকরা ঘাটে গাড়ি আনতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, আগে ঘাটে লাইনের পর লাইন গাড়ির সিরিয়াল থাকতো। নানা সমস্যাও হতো। এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। গাড়ি কমে যাওয়ায় আমাদের ঘাটের আয় কমেছে কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। ঘাটে তিনটি ফেরি রিজার্ভে রেখে রোস্টার অনুযায়ী গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। আগে ফেরির জন্য গাড়ি বসে থাকতো। এখন গাড়ির জন্য ফেরি বসে থাকে।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।