রমজানে মাছেই ভরসা মধ্যবিত্তের
জেলা শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার কলেজশিক্ষক রফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে শহরের প্রধান বাজার রাজনগর হাটের মাছের বাজারে মাছ কিনছিলেন। পবিত্র রমজানে মধ্যবিত্তের জন্য মাছই উপযুক্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পঞ্চগড় টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের এ প্রভাষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গরুর মাংস ৭০০ এবং খাসির মাংস ৮০০ টাকা কেজি। এর বিপরীতে চাষের বড় আকারের যেকোনো মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি পাওয়া যায়। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এবারের রমজানে মাছের ওপরেই ভরসা করতে হবে।’
স্থানীয়রা জানান, দেশের অন্যান্য জেলার মতো প্রতি বছর রমজানের শুরুতে পঞ্চগড়ে মাছ, মাংস, শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও দাম বাড়ানো হয়। এবারও দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সবজিতে কেজিপ্রতি ১০ টাকা, মাছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও মুরগিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম বেড়েছে। কাঁচামরিচসহ জেলার বাইরে থেকে আসা সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দুপুরে রাজনগর হাট ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র রমজান উপলক্ষে জেলা প্রশাসন নির্ধারিত দামে মাছ, মাংস ও মুরগি বিক্রি হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের আহ্বানে বণিক সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয় ৬৬০ টাকা কেজি। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে ছাগলের মাংস ৬৫০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, খামারের মুরগি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, চাষের মাছ ২০০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা সদরের অমরখানা ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকার কৃষক আজগর আলী বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা টমেটো ১০ টাকা, লাউ আকার অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ টাকা, শসা ২০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান। তবে তারা বাজারে দ্বিগুণ দামে খুচরা বিক্রি করেন।
পঞ্চগড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী জয়নুল হক বলেন, স্থানীয়ভাবে মাছের জোগান কম। এখানে জয়পুরহাট, নাটোর থেকে পুকুরে চাষ করা বড় আকারের মাছ আসে। কয়েকদিন আগে এসব মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হতো। এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা লাভ করি। তবে দেশি ও নদীর মাছের চাহিদা বেশি এবং জোগান কম হওয়ায় দাম সব সময় বেশি থাকে। দেশি শোল ৫০০ থেকে ৬০০, নদীর ছোট মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাগুর মাছ ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
খাসির মাংস বিক্রেতা অহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের ছাগলের মাংস ৬৫০ টাকা বিক্রির কথা বলা হলেও কোনোভাবেই সাতশর কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না। ছাগলের দাম বেশি হওয়ায় সে হিসেবে মাংস বিক্রি করতে হয়। তবে খাসির মাংস প্রশাসন নির্ধারিত ৮০০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করা হচ্ছে।
গরুর মাংস বিক্রেতা মো. রাব্বি বলেন, রমজানের আগে থেকে গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছিল। এখনো সে দামেই বিক্রি করছি। গরুর দাম এখন অনেক বেশি।
মিরগর এলাকার পরিবহন শ্রমিক আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের মতো পেশাজীবীদের অবস্থা ভালো না। মাছ, মাংস আমাদের কপালে জোটে না। আগে যেভাবে চলতাম, পবিত্র রমজানে সেভাবে চলেই রোজা রাখতে হবে।’
এ বিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পরশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত কেউ নিলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মো. জরুহুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই দামে বিক্রি হচ্ছে কি না তা আমরা মনিটরিং করছি।
এসআর/জেআইএম