‘গরুর মাংস নিতে এসে ৫০০ টাকায় দুই কেজি ব্রয়লার কিনেছি’
রমজান সামনে রেখে সারাদেশের মতো কিশোরগঞ্জেও ভোক্তা পর্যায়ে সবজির বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বেড়েছে মাছের দামও। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ও বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকালে পৌর শহরের পুরান থানা, বড়বাজার, কাচারিবাজার ও বউ বাজারের সবজি বাজার ঘুরে এমনটা জানা যায়।
দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। টমেটো কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩০ টাকা কেজি, গাজর ১৫ টাকা বেড়ে ৫০, বেগুন ২০ টাকা বেড়ে ৭০-৮০, কাঁচামরিচ ১০ টাকা বেড়ে ১০০, লেবু ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা, শসা ২৫ টাকা বেড়ে ৬০, চালকুমড়া ৩০-৩৫, পেঁপে ২৫-৩০, করলা ৭০-৮০, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে ৫০-৬০ দরে বিক্রি হয়েছে।
বড় বাজারের সবজি বিক্রেতা সোয়াদিকিন জানান, শিলাবৃষ্টির কারণে অনেক সবজিই নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারে সবজির আমদানি কম। এজন্যই কিছুটা বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে।
পুরান থানার সবজি ব্যবসায়ী মো. রিয়েল রহমান জানান, রমজান উপলক্ষে সব সবজিতে একটু দাম বেড়েছে। সবজি কিনে বেশি লাভেই বিক্রি করতে হয়। কারণ অনেক সময় অর্ধেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়।
পৌর শহরের বউবাজারে ব্যবসায়ী দীন ইসলাম বলেন, আমরা বড় বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করি। বুধবার সকালে বড় বাজারে পাইকারি বেগুন ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০, শসা ৩৫, লেবু ৯০, টমেটো ২২ ও গাজর ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।
পৌর শহরের হারুয়া বউবাজারে আসা রমজান মিয়া বলেন, যেভাবে দাম বেড়েছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য সবজি কেনাও কঠিন হয়ে উঠেছে।
পুরান থানা বাজারে সবজি কিনতে আসা রিপা বেগম বলেন, রমজান সামনে রেখে সব সবজিরই দাম বেড়েছে। মাছ, মাংসসহ সব কিছুরই দাম বেশি। যে হিসাব করে বাজারে এসেছি দাম বেশি দিয়ে তার থেকেও কম বাজার নিয়ে ফিরছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, আমরা কৃষকরা কষ্ট করে সবজি চাষ করি। কিন্তু সঠিক দাম পাই না। কিন্তু বাজারে বিক্রির হাত বদলে দ্বিগুণ দাম হয়।
চর পাকুন্দিয়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, বেগুন বাজারে পাইকারি দরে ৪৫ টাকা নেই। কিন্তু সেই বেগুন খুচরা বাজারে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফসল ফলাই আমরা আর লাভ করে পাইকাররা।
এদিকে পৌর শহরের পুরান থানা ও বড় বাজার এবং কাচারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব প্রজাতির মাছেরই দাম ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। কাতল মাছ কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৩০০, পাঙাশ ২০ টাকা বেড়ে ২০০, তেলাপিয়া ৪০ টাকা বেড়ে ২২০, পুঁটি মাছ ২০ টাকা বেড়ে ১২০, রুই ২৫ টাকা বেড়ে ২৮০-৩০০, শিং ৩০ টাকা বেড়ে ৩২০-৩৫০ ও সিলভার কার্প ২০ টাকা বেড়ে ১৬০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পুরান থানা বাজারে ৫০ বছর ধরে মাছ বিক্রি করেন মো. হানিফ মিয়া। তিনি বলেন, জীবনেও মাছের দাম এমন বাড়েনি। গত রমজানের থেকে এবার মাছের দাম অনেক বেশি।
মাছ ব্যবসায়ী রোমেল মিয়া বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় মাছের আমদানি কম থাকায় দাম বেশি।
বাজারে মাছ কিনতে আসা আবদুল আজিজ বলেন, যেভাবে মাছের দাম বেড়ে চলছে; কিছু দিন পর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পাতে মাছ জুটবে না।
বাজারে গত সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি মুরগির কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৬০০, ব্রয়লার ১০ টাকা বেড়ে ২৪৫ ও পাকিস্তানি মুরগি ২০ টাকা বেড়ে ৩৬০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পোলট্রি মুরগির ডিমের হালি ৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গরুর মাংস গত সপ্তাহের মতোই ৭২০-৭৫০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১০০০-১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের পুরান থানা বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. রমিও ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে সব মুরগিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসের জন্য মানুষ বেশি করে মুরগি কিনছেন। বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম। এছাড়া গরু ও ছাগলের মাংসের দাম বেশি থাকায় মুরগির ওপর চাপ বেড়েছে। এসব কারণেই মুরগির বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে।
শহরের কাচারি বাজারে গরুর মাংস কিনতে এসেছিলেন শফিকুল ইসলাম। তিনি গরুর মাংসের দাম শুনে মুরগির দোকানে যান। কিন্তু দেশি মুরগির দাম শুনে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য এ রমজানে গরুর মাংস দিয়ে সেহরি খাওয়া হবে না। বাজারে গরুর মাংস নিতে এসে ২৪৫ টাকা কেজিতে দুই কেজি ব্রয়লার কিনে নিয়ে যাচ্ছি। সেহরিতে মাংসের স্বাদ বলতে আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মুরগিতেই ভরসা। কিন্তু এতেই ৫০০ টাকা চলে গেছে।’
মাংস বিক্রেতা ইসলাম উদ্দিন বলেন, গরু ও ছাগলের মাংসের বাজার বাড়েনি। গত সপ্তাহের মতোই স্থিতিশীল।
এসজে/এএসএম