৭০ টাকায় কাঁচামরিচ কিনে একই বাজারে ১০০ টাকায় বিক্রি

বি এম খোরশেদ বি এম খোরশেদ , মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০১:২৬ পিএম, ২৩ মার্চ ২০২৩
পাইকারি কেনার পর একই বাজারে বসে খুচরা বিক্রি করছেন কাঁচামরিচ

কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজের জন্য বিখ্যাত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বরংগাইল বাজার। এ বাজারে বিক্রির জন্য এক মণ কাঁচামরিচ নিয়ে এসেছেন কৃষক গোলাপ খান। বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী ৭০ টাকা কেজিতে কাঁচামরিচ কিনে নেন। কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো ওই ব্যবসায়ী বাজারের এক পাশে একটি চট বিছিয়ে সেই মরিচ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় বরংগাইল বাজারে গিয়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে। মাত্র এক হাত ঘুরেই ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেলো ৩০ টাকা।

jagonews24

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতা আরমান বলেন, ‘ভাই পুঁজি খাটিয়ে আমাদেরও তো লাভ করতে হয়।’ এক বাজারেই কেজিতে ৩০ টাকা কীভাবে দাম বাড়লো এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

একই বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক আবজাল হোসেন। তিনি বলেন, খরায় এবার কাঁচামরিচ উৎপাদন কম হয়েছে। তাই বাজারে দাম বেশি। তবে কৃষকের চেয়ে বেশি লাভ করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা কৃষকের এক টাকার জিনিস ১০ টাকায় বিক্রি করেন।

পেঁয়াজ আড়তে দেখা গেলো, ২৬ টাকা কেজিতে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ। খুচরা বাজারে সেটা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি।

jagonews24

স্থানীয় গাঙ্গডুবি গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কমেছে। রমজান উপলক্ষে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার কারণে বাজারে দাম আরও কমবে।

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, মানিকগঞ্জে পাইকারি বাজারে শসা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজিতে, পটল ৪০-৫০, বেগুন ৩০-৩৫, করলা ৪০-৪৫, গাজর ২০-২৫, পেঁপে ২০-২৫, প্রতি পিস লাউ ৪০-৪৫ ও এক হালি লেবু ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে প্রতিটি সবজির দামই অনেক বেশি। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, পটল ৮০, বেগুন ৪০, করলা ৬০, গাজর ৩০, পেঁপে ৩০, করলা ৬০, প্রতি পিস লাউ ৬০ ও লেবুর হালি ৩০ টাকা।

jagonews24

রমজান শুরুর আগের দিন যেন মাছের বাজারেও আগুন। স্থানীয় টেপড়া বাজারে চাষের পাঙাশ (বড়) বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। তবে ছোট সাইজের পাঙাশের দাম ১৮০ টাকা কেজি। বরিশালের মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে। বাজারে দেশি মাছের চেয়ে চাষের মাছ বেশি দেখা গেছে।

গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা। আর খাসির মাংস ১০০০-১১০০ টাকা কেজি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৬০-২৭০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক পর্যায় থেকে পাইকার এবং সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে সবজির দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এজন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকার কারণকেই দুষছেন ভোক্তারা।

jagonews24

উসমান গণি নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘বাজারে নৈরাজ্য চলছে। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সবজির দামের পার্থক্য অনেক। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রমজান মাস শুরু হয়ে গেলো। বাজারে এসে তো আমরা হতাশ। সব জিনিসেরই দাম বেশি। এভাবে চলতে থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষ বাঁচবে কী করে।’

অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বেসরকারি চাকরিজীবী মামুন বলেন, ‘অতি মুনাফার লোভ সবাইকে পেয়ে বসেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে সব কিছুর দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়াচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত অভিযান দরকার।’

জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল জানান, রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছেন তারা। অসাদু ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।