উপকূলে সুপেয় পানির জন্য পাড়ি দিতে হয় মাইলের পর মাইল
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার চারপাশে বিস্তৃত জলরাশি। এর সবখানেই শুধু লবণাক্ততা। বর্ষায় সহজে পুকুরের পানি পাওয়া গেলেও শুষ্ক মৌসুমে এখানে সুপেয় পানি যেন সোনার হরিণ। এক কলস পানির জন্য পাড়ি দিতে হয় মাইলের পর মাইল।
এ অবস্থা শুধু কয়রায় নয়, উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ ও পাইকগাছায়ও সুপেয় পানি মেলে সহজে। খাবারের চেয়ে পানির জন্য সংগ্রাম করতে হয় বেশি। পুকুরের কাদামিশ্রিত ও লবণযুক্ত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এতে আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। তাই পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানির দাবি এলাকাবাসীর।
কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর বটতলা এলাকায় একটি সরকারি পুকুর আছে। যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া যায়। মঙ্গলবার বিকেলে ওই পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, খাওয়ার পানি নিতে দলবদ্ধ হয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। আবার অনেকে ব্যস্ত কলসিতে পানি ভরতে।
মহেশ্বরীপুর গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে পানি নিতে এসেছেন হালিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘পাইপলাইন দিয়ে যদি আমাদের কিছুদিন পানি দিত কেউ, তাহলে অনেক উপকার হতো।’
সাতহালিয়া গ্রামের কুদ্দুস মালি, আয়শা বিবি বলেন, ‘আমাদের পুকুরের পানি ছাড়া ভরসা নেই। আমাদের এখানে টিউবওয়েলের পানি ভালো হয় না। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের মাধ্যমে একবার টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল। কিন্তু মিষ্টি পানি পাইনি। কিন্তু পুকুরের পানি পান করলেও প্রায়ই কোনো না কোনো পেটের রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে আমাদের।’
৬ নম্বর কয়রা গ্রামের রেবতি মন্ডল বলেন, ‘আমাদের কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে পুকুরের পানি এনে পান করতে হয়। এ রকম সমস্যা অধিকাংশ জায়গায়।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু কয়রায় সুপেয় পানির খুবই অভাব। কিছু কিছু এলাকায় টিউবওয়েল কাজ করে না। পানিতে আয়রন বেশি। ফলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। উপজেলার ৫ নম্বর কয়রা, ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা, পাথরখালী, মঠবাড়ি, তেঁতুলতলার চর, সাতহানি, চৌকুনী, গাতিরঘেরিসহ অধিকাংশ এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট আছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী ইশতিয়াক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, কয়রা উপজেলাটি বঙ্গোপসাগরের একেবারে কাছে হওয়ায় এ অঞ্চলের অর্ধেক মানুষ পুকুরের পানি পান করে থাকেন। লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় খাবার পানির সংকট থাকে। তবে সরকারিভাবে ট্যাংক সরবরাহ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণের চেষ্টা চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কয়রার মানুষের খাবার পানি সংকট নিরসনে সরকারি পুকুরগুলো সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পলিমার ট্যাংক বিতরণসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
খুলনা-৬ আসনের (কয়রা-পাইকগাছা) সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু জাগো নিউজকে বলেন, কয়রার মানুষের খাবার পানি সংকটের বিষয়টি চিন্তা করে কয়েক হাজার পানির ট্যাংক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া পিএসএফ বসানোসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খাবার পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এসজে/এমএস