জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
শয্যা বাড়লেও বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক এক্স-রে মেশিন না থাকায় রোগীদের এক্স-রে করাতে হয় বাইরের বেসরকারি ক্লিনিকে। এছাড়াও হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ১২ বছর আগে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হলেও সে তুলনায় নেই কোনো সুযোগ-সুবিধা।
এদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট থাকায় হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিছন্নতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে রোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের। কর্তৃপক্ষ বলছে সমস্যা সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। দ্রুত ডাক্তার নিয়োগসহ অন্যান্য সুবিধা চালু করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। তবে ৫০ শয্যা হওয়ার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে চালু হয়নি বাকি ১৯টি বেড। ভবন থাকলেও জনবল সংকট ও বরাদ্দ না পাওয়ায় অব্যবহৃত পড়ে আছে সেটি। ৫০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে সেখানে ৩৩ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১৫ জন। এছাড়াও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১০৩ জনের মধ্যে রয়েছেন ৪১ জন। ৫০ শতাংশই শূন্য রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদ।
এদিকে হাসপাতালে আধুনিক এক্স-রে মেশিন না থাকায় বাইরের বেসরকারি ক্লিনিকে চড়া মূল্যে এক্স-রে করছেন বেশিরভাগ রোগী। প্রতিনিয়ত সার্জারি, সিজারসহ অন্যান্য অপারেশন হলেও হাসপাতালে নেই কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত এনেস্থেশিয়ান। এছাড়াও কয়েকদিন ধরে সংকট দেখা দিয়েছে অতি জরুরি কিছু ওষুধের। এতে বাধ্য হয়েই চিকিৎসার জন্য রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে বেশিরভাগ ওষুধ।
পৌর শহরের বগুলাগাড়ী এলাকার খোকা রাম বাবু। শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও সেবা না পেয়ে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘টিকিট কাটি সবাকে ওই ১১ নম্বর রুমের সিরিয়াল দেয়। ওটে একটা ডাক্তার, ওই একটাই শ্যাষ, আর ডাক্তার নাই। লেখি চান তা লেখিও দেয় না। আর এক রুমে ৪-৫টা লাইন। হুড়াহুড়ি পারাপারি লাগেছে। ডাক্তারের সমস্যা, ডাক্তার নাই। মনে হয় বাকিগুলা জুয়া খেলের বসছে। সরকার কি একটাকিই বেতন দেয়, নাকি সবাই পায়?’
মাথা ভাঙ্গা এলাকার আমেনা খাতুন। মায়ের শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন ৩ দিন আগে। কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে দিলেও দামী ইনজেকশন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়, তবে যেটা দামি সেটা বাইরে থেকে কিনে দিতে হয়। এখানে চিকিৎসাও হয় না ভালোভাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগীর স্বজন বলেন, এখানে এক্স-রে মেশিন আগের। এক্স-রে করলে কিছুই বোঝা যায় না। বাইরেতো চকচকে দেখা যায়।
হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে জানান, প্যারাসিটামল, ভিটামিন, এন্টিবায়োটিকসহ সিরাপের সংকট আছে। যেসব আছে সেগুলো দিচ্ছি। বাকিগুলো বাইরে থেকে নেওয়ার জন্য বলছি।
এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মেজবাহুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ আসলে মনে করে হাসপাতাল শুধুমাত্র ডাক্তার আর নার্স দিয়েই চলে। তবে অন্যান্য স্টাফ, ওয়ার্ডবয়, সুইপার, কর্মচারী সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হয়। আমাদের এখানে জনবল সংকট আছে। ৫০ শয্যার হলেও আমরা এখানে ৩১ শয্যার জনবল নিয়ে কাজ করছি। এদিক থেকে বলতে গেলে আমরা চরম সংকটে আছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে যে এক্স-রে মেশিনটি আছে সেটি এনালগ। বাইরে থেকে এক্স-রে করালে ফিল্ম ঝকঝকে হয়। তখন রোগীর লোকই বলেন স্যার বাইরে করি। এটা আসলে আমাদের দুর্বলতা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসান মো. রেজওয়ানুল কবীর জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের জনবল সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। শিগগিরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করি। আমাদের ওষুধ সংকট নেই, কিছু ওষুধের সাপ্লাই নেই, যা আমি বাইরে থেকেও কিনতে পারবো না। বরাদ্দ পেলে সব সমস্যার সমাধান হবে। মানুষ ৫০ শয্যার সুবিধা পাবেন।
এফএ/জেআইএম