‘অটোরিকশা হামার কামাই কমাইচে’
কুড়িগ্রামে এখন আর পায়েচালিত রিকশা তেমন চোখে পড়ে না। একসময়ে ক্রিং ক্রিং বেলের শব্দে শহর দাপিয়ে বেড়ানো রিকশাগুলো এখন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। দু-একটি থাকলেও সেই রিকশাগুলো বেশ জরাজীর্ণ। নেই আর আগের মতো ঝকঝকে রং কিংবা রিকশার পেছনে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের আর্ট করা ছবি।
শুধু তাই নয়, পায়েচালিত রিকশাগুলোতে এখন তেমন যাত্রীও উঠতে দেখা যায় না। গ্যাস সিলিন্ডার বহন কিংবা দোকানিদের হালকা মালপত্রের বাহন হিসেবে এই রিকশা ব্যবহার করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম শহর ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের দাদা মোড় এলাকায় একটি আর পৌর বাজারে কয়েকটি পায়েচালিত রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চালকরা। তাদের প্রত্যেকের বয়স চল্লিশের বেশি। দীর্ঘসময় ধরে ধরে নির্বাক তাকিয়ে আছেন যাত্রীর আশায়। একেবারে পরিচিত কেউ ছাড়া পায়েচালিত রিকশায় যাত্রী ওঠেন না বলে জানান চালকরা।
কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব রিকশাচালক মো. জহুরুল হকের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ২০ বছর ধরে রিকশা চালাই। আগে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া পেতাম। এখন রিকশা নিয়ে বের হলে ২০০ টাকাও জোটে না। বেলা প্রায় শেষ, পকেটে মাত্র ১০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে কী আর সংসার চলে!
তিনি আরও বলেন, পায়েচালিতে রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। টাকা-পয়সা থাকলে হয়তো একটা অটোরিকশা কিনতাম।
আরেক পায়েচালিত রিকশাচালক মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘অটোরিকশা আসি তো হামার কপালে দুঃখ নাগাইছে। অটোরিকশা হামার কামাই কমাইছে। হামরা গরিব মানুষ। হামার কপাল সারাজীবন পোড়া। ছোটবেলা থেকে পায়ে রিকশা চালায়ে আসছি। অভাবের সংসারে অটোরিকশা কেনার টাকা কন্ডাই (কোথায়) পাই? তাছাড়া অটোরিকশার হ্যান্ডেল ধরতে ভয় নাগে, কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে কে জানে।’
মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেন, পায়েচালিত রিকশার দিন শেষ হয়ে গেছে। দোকানপাটের মালামাল বহন ছাড়া যাত্রীরা আর ওঠে না। আমি কয়েকটি দোকানের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। প্রতিদিন শুধু তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করে কোনোরকমে সংসার চালাই।
পায়েচালিত রিকশার যাত্রী মো. আব্দুল হাই বলেন, কাছাকাছি কোথাও গেলে কিংবা ছোট জিনিসপত্র বহনে পায়েচালিত রিকশা ব্যবহার করি। এছাড়া দূরে গেলে অটোরিকশায় চড়তে হয়। ঝুঁকি থাকলেও অটোরিকশায় সময় কম লাগে।
কুড়িগ্রাম রিকশা-ভ্যান শ্রমিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো. আবদার হোসেন বুলু বলেন, পায়েচালিত রিকশার সংখ্যার তেমন কোনো তথ্য নেই। পুরো জেলাজুড়ে ১৫-২০টি থাকতে পারে। এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাই চলছে। সময়ের পরিবর্তনে পায়েচালিত রিকশা হারিয়ে যাচ্ছে।
এমআরআর/জেআইএম