উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার বগুড়া!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৮:৫০ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২৩

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে পরপর তিন দফা। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়েও জেলাওয়ারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে রয়েছে বগুড়া। এখন আওয়ামী লীগের চলতি মেয়াদের শেষ সময়। স্বাভাবিক কারণেই এই অঞ্চলের মানুষের কাছে দলের নেতাকর্মীরা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে ভোট কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।

আওয়ামী লীগ বগুড়া থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে একটিও আসন না পেলেও ২০০৮ ও ২০১৩ এবং ২০১৮ নির্বাচনে সাতটির মধ্যে দুটি আসনে জয়লাভ করে। সর্বশেষ উপ-নির্বাচনেও ৫০ বছর পর বগুড়া সদর আসনটিতে জয়লাভ করে নৌকার প্রার্থী।

আরও পড়ুন- অভিযান-মামলায়ও থামছে না তিন চাকার যান

সাধারণ মানুষের অব্যাহত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কয়েক দফায় বগুড়াবাসীর পক্ষ থেকে ২২টি প্রস্তাব হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান ও সাবেক জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় বগুড়ার উন্নয়ন প্রস্তাবনাগুলো প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, এসব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বগুড়ার মানুষ এখনও উন্নয়ন হবে বলে বিশ্বাস করছে। বিএনপি সরকারের শাসনামলে বগুড়ার উন্নয়ন হলেও হাজার হাজার মানুষ বঞ্চনার শিকার হয়েছে। বনানী-মাটিডালি সড়ক সম্প্রসারণ এবং অনেক প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তাদের পুনর্বাসনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন, দখলবাজি, হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে বহু মানুষ। এসব নানা কারণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা এই দলটির নেতাকর্মীরাও এখন চাঁজাবাজি, দখলবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুন- কৃষি যন্ত্রাংশে বগুড়ায় নীরব বিপ্লব

এসব কারণে বগুড়ার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে জেলায় ভোটের হিসাব সম্পূর্ণ পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি- বগুড়ার উন্নয়ন যে হয়নি কথাটা সঠিক নয়। তবে বগুড়াবাসীর কিছু দাবি আছে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, বগুড়াকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা, বিমানবন্দর চালু, শহরের করতোয়া নদী দখলমুক্ত করে পুনর্খনন, প্রস্তাবিত টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপন, নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ, ছেলে ও মেয়েদের জন্য দুটি সরকারি বিদ্যালয় ও বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথ স্থাপন, শহর থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত পৃথক সড়ক নির্মাণ, সাংবাদিকদের আবাসন প্রকল্প, আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ, দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন, এই অঞ্চলকে অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা, কৃষি মেশিনারি শিল্পের বিকাশে পৃথক জোন করা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও লাইব্রেরি স্থাপন, মহাস্থানগড়কে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে যমুনা নদী খনন, বগুড়া আবহাওয়া অফিসের আধুনিকায়ন, হার্ট ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও সারিয়াকান্দিতে ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন করা।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বগুড়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথ স্থাপন, শহর থেকে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত পৃথক সড়ক নির্মাণ কাজের তৎপরতা শুরুর কাজ চলছে। অন্যগুলোর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এখনও আসেনি।

বগুড়ার সাংস্কৃতিক ব্যক্তি তৌফিক হাসান ময়না জানান, বগুড়াবাসী মনে করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার তার দীর্ঘ শাসনামলে জেলার উন্নয়নে নজর দেবে। সম-উন্নয়ন করবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো।

বগুড়ার নারুলী এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, আপনারা আমাদের এলাকায় এসে দেখেন রাস্তাঘাটের কী করুণ অবস্থা!

গাবতলীর বাগবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, বাগবাড়ীর রাস্তাটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এটা দিয়ে চলাচল করাই দায়। একই অবস্থা অন্য এলাকার সড়কেরও।

জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। একসময় বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হলেও এখানে আওয়ামী লীগ অনেক ভোট পেয়েছে। তাহলে তারা কেন উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার হবে?

ক্ষমতাসীন দলের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, এভাবে চলতে পারে না। এখনই এ ব্যাপারে নেত্রী নজর না দিলে আগামী নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আমরা মানুষের কাছে যেতে পারবো না।

আরও পড়ুন- ব্লাড ব্যাংকের রক্ত ভয়ংকর!

বগুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে চালুর ব্যাপারে একটি প্রস্তাব অনেক আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা মেলেনি। বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ স্কুল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। রেললাইন স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, এই সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। বগুড়ার উন্নয়ন হচ্ছে না তা বলা যাবে না। মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নেই। তবে বগুড়াবাসী হিসেবে আমাদের চাহিদা রয়েছে অনেক কিছুর। এসব ব্যাপারে নেত্রীর কাছে জানানো হয়েছে। আমরা ভালো কাজের মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করতে চাই।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।